অ্যাম্বুলেন্স আছে চালক নেই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু চালক নেই। যে কারণে র্দীঘ ১১ মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিশেষ করে অসুস্থ মানুষ ও তাদের স্বজনদের। বাধ্য হয়ে উচ্চ মূল্যে মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকারসহ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করছেন তারা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারী তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামছুন্নাহারসহ অপর একজন ডাক্তারের সরকারি বাসভবনে চুরি হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে চুরির নির্দেশদাতা হিসেবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকেও (৪৫) আটক করা হয়। পরে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করে তাদের কুড়িগ্রাম জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
এ ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকে ১৩ জানুয়ারিতে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে গ্যারেজে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। পরে ১১ এপ্রিল অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী কারাগার থেকে জামিনে বের হন। কিন্তু বরখাস্তকৃত চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর নিয়ম নেই। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাব্বর আলীর হাতে অ্যাম্বুলেন্স দিচ্ছে না।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার এমদাদুল হক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমার মা অসুস্থ হন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করি। না পেয়ে বাড়তি মূল্য দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করি।’ তিনি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
একই ইউনিয়নের কবিরমামুদ এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় আমরা রোগীর স্বজনরা চরম বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করেই অসুস্থ রোগীকে রংপুর নিয়ে যাচ্ছি। অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন আছে। অনেক সুবিধা, খরচও অনেক কম। বেসরকারি মাইক্রোবাসে অক্সিজেন নাই, খরচও অনেক বেশি। আমরা চরম দুর্ভোগ সহ্য করছি। ১১ মাস অতিবাহিত হলেও অ্যাম্বুলেন্স চালকের ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুহেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমার যোগদান চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি। সেদিন অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বরকে বরখাস্ত করা হয়। চালক একাব্বর জামিনে মুক্ত হলেও বরখাস্ত আদেশ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত তাকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো যাচ্ছে না। যে কারণে ১৩ জানুয়ারি থেকে অ্যাম্বুলেন্স তালাবদ্ধ অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে। বিষয়টি একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক যিনি নিয়োজিত ছিলেন তিনি সাময়িক বরখাস্ত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন। অ্যাম্বুলেন্স চালক নেওয়ার ব্যাপারে খুব দ্রুত সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান হবে।’
/এএন