৬১ বছরের পুরোনো পাঠাগারটি ৮ বছর ধরে বন্ধ
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মরহুম সাংবাদিক শামছুল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ বেলাল পাঠাগার। ৮ বছর ধরে পাঠাগারটি বন্ধ রয়েছে। পাঠাগারটি বন্ধ থাকায় ভিতরে থাকা ২০ হাজার মূল্যবান বই ঘুন পোকায় ও মরিচা ধরা আলমারিতে নষ্ট হচ্ছে।
পাঠাগারটি ১৯৬২ সালে ৩০টি বই নিয়ে গফরগাঁও পাবলিক লাইব্রেরি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেলাল আহমেদ শহীদ হলে ১৯৭২ সালে গফরগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলাল আহমেদের নামে নামকরণ করা হয় ‘শহীদ বেলাল পাঠাগার’। ভরা যৌবনের ছিমছাম দেহের অধিকারী শামছুল হক শুরু থেকেই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, থাকেন আমৃত্যু। ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি শামসুল হক ব্রেনস্ট্রোকে মারা যান। পরে তাকে শহীদ বেলাল পাঠাগার আঙিনায় সমাহিত করা হয়।
তার মৃত্যুর পর অব্যবস্থাপনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ৬১ বছরের পুরোনো শহীদ বেলাল পাঠাগার। গ্রন্থাগারটি সংস্কার করে আবার চালু করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ পাঠকেরা।
জানা যায়, পাঠাগারের সামনের সড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় লম্বালম্বিভাবে পাঠাগারের প্রধান কক্ষের অর্ধেকটা ভাঙা পড়েছে। পাঠাগারের দরজা জানাগুলোও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দুর্লভ ২০ হাজার গ্রন্থ ও পাঠাগারটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা না গেলে মৃত্যু ঘটবে আলো ছড়ানো শহীদ বেলাল পাঠাগারের।
শামছুল হক ১৯৯৪ সালে সাংবাদিকতায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব পদক ও ২০০৭ সালে ময়মনসিংহ জেলায় সাদা মনের মানুষ হিসেবে নির্বাচিত হন। শামছুল হক শিক্ষাজীবন শেষ করে মাত্র ২ বৎসর মাইনর স্কুলে শিক্ষকতার পর থেকে তিনি ব্রতী হন পাঠাগার গড়ে তোলাসহ মফস্বল সাংবাদিকতা পেশায়। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সর্বশেষ দৈনিক ইত্তেফাকের গফরগাঁওয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ শামছুল হক এর আগে দৈনিক পাকিস্থানসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় কাজ করেছেন।
চিরকুমার শামছুল হকের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছুই ছিল না। যৌবনেই ছেড়েছেন নিজ ঘর-বাড়ি, ভাইবোন ও আত্মীয় স্বজন।
পাঠাগারটিতে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ২০ হাজারেরও অধিক। দুর্লভ অনেক বই, বহু পুরোনো পত্র-পত্রিকার কপি, পান্ডুলিপিসহ দুষ্প্রাপ্য ডকুমেন্টস রয়েছে। শুধু সরকারি অনুদান নয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক এসব সংগ্রহ করেছেন নিজ উদ্যোগে। হাত পেতেছেন শত শত মানুষের কাছে। লক্ষ্য ছিল শুধু একটাই-পাঠাগার গড়ে তোলা। হাতে ৫ টাকা পেলেই তিনি ছুটে গেছেন কোথায় বই আছে তার সন্ধানে।
রাজধানী ঢাকা শহরে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা ফুটপাতের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন দুষ্প্রাপ্য সব বই। এমনকি বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে ওজনে কিনেছেন বই। বই সংগ্রহ, পরিচর্যায় আর সাংবাদিকতায় কেটেছে তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
শহীদ বেলাল আহমেদের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাল আহমেদ বলেন, আগামী মাসে পাঠাগারের সংস্কার কাজ করব ইনশাআল্লাহ। পাঠাগারের সামনের সড়কের নির্মাণকাজ চলায় এতদিন সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, পাঠাগারটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
একে/এএন