কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা
উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে পৌষের প্রথম দিনে থেকে তীব্র শীত শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে এ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ।
কনকনে ঠাণ্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়েছেন। রাতজুড়ে ঘন কুয়াশার দাপুটে উপস্থিতি সকালেও চারপাশ আবৃত রাখছে। স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, শীতের তীব্রতা বেড়ে ডিসেম্বরের ২০ তারিখের পর একটি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জেলা জুড়ে ছিন্নমূল মানুষের চরম ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। তবে শীত মোকাবিলায় জনভোগান্তি কমাতে সরকারের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, এ জেলায় গত কয়েক দিন ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। রবিবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ২০ ডিসেম্বরের পর জেলায় একটি মৃদু ধরণের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। সামর্থবানদের চাহিদা থাকায় বৈদ্যুতিক দোকানগুলোতে গিজার এবং ইলেকট্রিক কেটলির বিক্রিও বেড়েছে। তবে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে আসছে বোরো মৌসুমে মজুরি বিক্রি করে রোজগারের যে সম্ভাবনা রয়েছে তাতে শীতের তীব্রতা তাদের কপালে ভাঁজ ফেলছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের সীমান্তবর্তী মশালের চরের বাসিন্দা দিনমজুর হামিদুল ইসলাম জানান, এবারের চিন্তা শীত নিয়ে। বানে নৌকায় কিংবা মাচায় উঠে জীবন বাঁচাই। কিন্তু বৌ-বাচ্চা নিয়ে শীত থেকে বাঁচব কী করে! তারপর এই শীতে কাজ করতে না পারলে খাওয়ার কষ্ট সহ্য করব কীভাবে! শীত বেশি হলে মাঠে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়, হাত পা হিম হয়ে যায়।’
ফুলবাড়ী উপজেলার ভ্যানচালক হাক্কু মিয়া ও জহুরুল হক জানান, এমন শীত ও ঠাণ্ডা থাকলে ভ্যান চালানো খুব কষ্টকর হয়ে যায়। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও বের হতে হয়।
এখনও গরম কাপড় অথবা কম্বল পাননি বলে জানান এই দুই ভ্যানচালক।
প্রান্তিক মানুষের এমন কষ্টেরকথা ভেবে স্থানীয় প্রশাসন শীত নিবারণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, শীত মোকাবিলায় জেলার ৯ উপজেলায় ও ৩ পৌরসভায় ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শীতার্তদের পোশাক কেনার জন্য উপজেলার চাহিদাভেদে ৮ থেকে ১৪ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, শীতে জেলার মানুষ যেন কষ্ট না পান সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন এনজিও থেকেও কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলাগুলোতে সেগুলো বন্টন করা হয়েছে।
এআর/এএন