শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন; শিকলবন্দী রুমি বেগম
স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়ির নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন রুমি বেগম (৪০)। গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার আমলাগাছী বাজারে মৃত পিতার বাড়িতে অসহায় মায়ের সঙ্গে অবস্থান করছেন তিনি।
স্থানীয়দের নিকট জানা যায়, উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের কয়ারপাড়া গ্রামের মৃত দবির উদ্দিন মিলিটারির কন্যা রুমি বেগম। চার বোনের মধ্যে তৃতীয় সে। ভালো ফলাফল নিয়ে এসএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয় রুমি বেগমের। বিয়ের পর ভালোই চলছিল রুমি বেগম এবং এনামুল মিয়ার দাম্পত্য জীবন। তারপর এক কন্যা সন্তানের জননী হন রুমি বেগম। সেখানে স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়ির নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তারপর তাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়! তার মেয়েটি এখন বিবাহ উপযোগী কন্যা হিসাবে বাবা এনামুলের আশ্রয়ে।
আমলাগাছী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন নারী পায়ে শিকলপরা অবস্থায় এক পা এক পা করে হেঁটে চলেছেন। শিকলের সঙ্গে দুপায়ে থাকা বালা দুটি পায়ে বাড়ি খাচ্ছে! পায়ের গোড়ালিগুলোসহ হাটু পর্যন্ত নানা স্থানে কড়া পড়ে থকথকে ঘা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তিনি ছোট ছোট পা ফেলে একা একা কথা বলে কিংবা গুনগুন করে গান গেয়ে বাজারের এপার হতে ওপার, এ গ্রাম হতে ও গ্রাম ঘুরে বেড়ান! হঠাৎ কোথাও ইংরেজি বা বাংলা লেখা দেখে থেমে গিয়ে জোর উচ্চারণে পড়ছেন।
রুমি বেগমের পিতার বসতবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি ছাপড়া ঘরে ছাগলের পাশে একটি টং এর উপরে তার বিছানা। এমন অমানবিক জীবন যাপন ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
রুমি বেগমের মা মেহেরুন্নেসাসহ পরিবারের অন্যরা জানান, শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন রুমি। তার চিকিৎসায় সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করেছে পরিবার। কিন্তু বর্তমানে ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে না হারানোর ভয়ে কামারের নিকট গিয়ে পায়ে কড়া বালা শিকল পড়িয়ে দিয়েছেন রুমির অসহায় মা। তিনি তার কন্যার সুচিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় এমপি এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
/এএন