নিম্নমানের চাল নিয়ে এলো ভারতীয় জাহাজ
ফের নিম্নমানের চাল নিয়ে এলো ভারতীয় জাহাজ এমভি বিএনসি আলফা। পাঠালো ভারতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাকফ ইন্ডিয়া। ওই চালের এক হাজার টন খালাসও করা হয়েছে। এরপর চালগুলো যে নিম্নমানের তা নজরে আসে। ফলে চাল খালাস বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যে মানের চাল আনার কথা বলা হয়েছিল তা না আনায় খালাস কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জাহাজটিকে আপাতত চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকতে বলা হয়েছে।’
খালাস করা চালগুলো পরীক্ষা করে খারাপ পাওয়া গেলে পুনরায় জাহাজে পাঠানো হবে। এসব চাল বর্তমানে চট্টগ্রাম দেওয়ানহাট সিএসডি, হালিশহর সিএসডি, কুমিল্লার চকবাজার এলএসডি গুদাম, চাঁদপুরের মতলব এলএসডি, সিলেট সিএসডি গুদামসহ ১০টি গুদামে পাঠানো হয়েছে।
আব্দুল কাদের বলেন, ‘সরকারিভাবে আমদানিকৃত চালের চালানে নিম্নমানের চাল পাঠায় ভারতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাকফ ইন্ডিয়া। এমভি বিএনসি আলফা নামে একটি জাহাজ ৭ হাজার ৬০০ টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছে। বৃহস্পতিবার জাহাজটি থেকে প্রায় ১ হাজার টন চাল খালাসও করা হয়। এরপর চাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
খাদ্য বিভাগের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক দপ্তরের চট্টগ্রামের প্রধান আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘সরকারিভাবে জি-টু-জি ভিত্তিতে ভারত থেকে একাধিক সরবরাহকারী চাল আনছে। সে ধারাবাহিকতায় ভারত থেকে গত ৩১ জুলাই ১৯ হাজার ২০০ টন সেদ্ধ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে এমভি ড্রাগন। ভারতীয় সরবরাহকারী ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (নাফেদ) এ চাল পাঠায়।’
জাহাজটি থেকে তিন হাজার ২০০ টন চাল নামানোর পর নিম্নমানের চাল দেখতে পাওয়ার চাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের চাল দেওয়ায় খালাস বন্ধ করে জেটি থেকে জাহাজ বের করে দেওয়া হয়। তখন চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চেয়েছিল চাল বাছাই করে নামানোর জন্য। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি।
এরপরও গত বৃহস্পতিবার ভারতের নাকফ ইন্ডিয়া ৭ হাজার ৬০০ টন চাল সরবরাহ করে। এসব চালের এক হাজার টন খালাসের পর বস্তা খুলে দেখা যায় চালের মান খুব খারাপ। এ সময় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জাহাজ থেকে চাল খালাস বন্ধ করে দেন।
খাদ্য বিভাগের মতে, সরকারের আমদানির দরপত্র চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার গ্রহণযোগ্য সীমা ৩ শতাংশ। কিন্তু শর্তের চেয়ে বেশি পরিমাণ মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা রয়েছে। ফলে চালগুলোর খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) মো. রায়হানুল কবীর রাতে ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা চাল সেই দেশের সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে। নাকফ ইন্ডিয়া নামের ভারতীয় সরবরাহকারী এই প্রতিষ্ঠান এমভি বিএনসি আলফা জাহাজে ৭ হাজার ৬০০ টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছে। ইতোমধ্যে এক হাজার টন চাল খালাস করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা দেখতে পেয়েছেন, নাকফ যে চাল নিয়ে এসেছে সেগুলোর কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চাহিদা বা স্পেসিফিকেশন বা বিনির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি।’
খাদ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রী, সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আমরা বসে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
রায়হানুল কবীর বলেন, ‘দেখেন এক লাখ টন চালের প্রায় ৯০ হাজার টন চলে এসেছে। আর সামান্য আসতে বাকি রয়েছে।’
আইকে/এনএইচবি/এএন