সিলেটে পর্যটকের ঢল, হোটেল ভাড়া দ্বিগুণ
বিজয় দিবস উপলক্ষে টানা তিন দিনের ছুটিতে সিলেটের সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। যে কারণে হোটেল-মোটেলগুলো শতভাগ বুকড থাকায় রাতযাপনে বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। যানবাহনের ভাড়া ও পর্যটন স্পটের কাছে খাদ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। এমনকি সিলেট নগরীর ছোট হোটেলগুলোতেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সিলেটের জাফলং, রাতারগুল, লালাখাল, বিছানাকান্দি, জৈন্তাপুরের শাপলার বিলসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে খবর নিয়ে জানা গেছে অগণিত পর্যটক আসছেন। সিলেট শহর লাগোয়া চা বাগান, হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার, শাহপরাণ (র.) এর মাজারেও প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দুই ওলির মাজারে জুমার নামাজে মুসল্লির সংখ্যাও ছিল ব্যাপক। মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণ ছেড়ে নামাজের সারি পৌঁছায় সড়কে। এমন অবস্থায় অতীতের লোকসান পুষিয়ে ওঠার আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
সিলেট হোটেল ও গেস্ট হাউস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল বলেন, ‘অতীতে যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা কঠিন। তবে বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি মিলে তিন দিনের ছুটি থাকায় সিলেটে অগণিত পর্যটক এসেছেন। কোনো হোটেলে রুম নেই। সুতরাং আশা করছি অতীতের লোকসানের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় হবে।'
তবে সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। সিলেট থেকে জাফলং সাধারণত যে ভাড়ায় রিজার্ভ গাড়ি নেওয়া যায় তার থেকে দ্বিগুণ ভাড়া হাকাতেও দেখা গেছে চালকদের। হোটেলগুলোতে অন্য সময় ভাড়া কম-বেশি করা গেলেও এবার তার কোন সুযোগ পাচ্ছেন না কেউ। বরং ভালো মানের হোটেলগুলোতে জায়গা না পেয়ে ছোট হোটেলে ৩০০ টাকার জায়গায় ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন পর্যটকরা।
ছোট এসব হোটেল সমিতির আওতায় না থাকায় চাইলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন সিলেট হোটেল ও গেস্ট হাউস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেটুকু জেনেছি সুযোগে তারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। কিন্তু তারা আমাদের সমিতির আওতায় না থাকায় আমাদের কিছু করার থাকে না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে।’
সরেজমিনে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় বিকাল তিনটায় গিয়ে দেখা যায় মানুষের ভিড়। শীতের মৌসুম হলেও এখানে ভারত থেকে আসা স্বচ্ছ জলে পর্যটকদের গা ভাসিয়ে দিতে দেখা গেছে। এ সময় কথা হয় খায়রুন ফাতিমা কলি নামের এক পর্যটকের সঙ্গে, তিনি এসেছেন খুলনা থেকে। খায়রুন ফাতিমা বলেন, ‘প্রথমবারের মত সিলেট ঘুরতে এসেছি। কিন্তু এখানে আসার পর গাড়ির ভাড়া মনে হচ্ছে অনেক বেশি। সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে এসেছি ২৭০০ টাকায়। তাছাড়া খাবারের দামও মাত্রাতিরিক্ত।’
জাফলংয়ের সংগ্রাম ক্যাম্প পর্যটন কেন্দ্রে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সানি আহমদ জানান, দুদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটক এসেছেন। দুদিনের পর্যটক সমাগমে আশাবাদী তিনি।
এদিকে পর্যটক বেশি আসায় সিলেট নগীর সকল রেস্টুরেন্টেও ভিড় দেখা গেছে। কিছু কিছু রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার জন্য ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে পর্যটকদের। সেই সঙ্গে শুক্রবার সাধারণত সিলেট নগর অনেকটা ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও স্বাভাবিক দিনের মতো যানবাহনের চাপ ছিল।
সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি, অতিরিক্ত দায়িত্বে পর্যটন) সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে বলা হয়। তিনি জানান, পর্যটকের সংখ্যা তার সঠিক জানা নেই। অতিরিক্ত ভাড়া ও খাদ্যের দামের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসইউ/এএন