টিএসপি সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আলু চাষিরা হতাশ
রংপুর জেলা আলু উৎপাদনের জন্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করে রংপুরের কৃষকরা। গত বছরের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবারও আলু চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু আলু চাষ অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান 'টিএসপি' সারের বস্তাপ্রতি ৩ টাকা দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
সাধারণ কৃষকদের দাবি, সারের দাম কমিয়ে উৎপাদিত আলুর দাম বৃদ্ধির। আলু চাষি নেতারা বলছেন, কৃষি উৎপাদনকে অব্যাহত রাখতে সার ও ডিজেলে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও রংপুরে প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে আলু রোপণ করেছেন কৃষকরা।
রংপুরের কাউনিয়ার কাচু, আলুটারী, সারাই, মদামদন, জয়বাংলা, পীরগাছা উপজেলার বড় দারগা, সাতদারগা, ইটাকুমারী, সড়েয়ারতল, মহিন্দ্রা ও দেউতি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে হতাশা নিয়েও আলু রোপণ করছেন কৃষকরা। সকালের কুয়াশা ও তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে আলু চাষের জমি প্রস্তুত করে পুরুষ-মহিলা চাষিরা একসঙ্গে আলুর বীজ বপন করছেন।
কাউনিয়ার আলুটারী এলাকার কৃষক জাহাঙ্গির মিয়া বলেন, ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও ৯ একর জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছি। গত বছর আলু চাষ করে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবার আলুর বীজের দাম কম থাকায় ৯ একর জমিতে আলু চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু আলু রোপণের শুরুতেই শুনছি টিএসপি সারের সঙ্কট। বাজারে এখন ৮শ টাকার টিএসপি সার ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মতো কৃষককে বাঁচাতে সরকারের উচিৎ আলু চাষের সময় সার ও কিটনাশকের দাম কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা।
কাউনিয়া উপজেলার খুচরা সার ব্যবসায়ী মো. শহিদার রহমান বলেন, ‘সরকারি সার ডিলাররা টিএসপি সারের সংকটের কথা বলে প্রতি বস্তা সার ২৫০ থেকে ৩০০শত টাকা বেশি নিচ্ছে। তাই আমরাও একটু দাম বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করছি।’
মোক্তার হোসেন নামে অপর এক আলুচাষি বলেন, ‘আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তত করতে আমাদের এই দিকে ২৪ শতকের এক দোনে খরচ হয় ১৫শ টাকা। পাশাপাশি এই জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করতে শেষ পর্যন্ত খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। আলু উৎপাদন করে আলুর দাম যদি কেজিতে ১৫ টাকার ওপরে না থাকে তবে প্রত্যেক আলু চাষি লোকসানের মুখে পড়বে। এজন্য সরকারিভাবে আলুর দাম নির্ধারণ করা দরকার।’
রংপুর জেলা কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট পশাল কান্তি নাগ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সরকারি উদ্যোগে আলু চাষীদের সুলভ মূল্যে সার, ডিজেল, কীটনাশক সরবরাহ এবং ব্যংকগুলো থেকে সহজ শর্তে বিনা সুদে কৃষি ঋণ প্রদান করা উচিত।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবাইদুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুর এবার ৫৩ হাজার ৫শ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাষ হলে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। রংপুর জেলার প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আলু রোপণ সম্পন্ন হবে।’
জিএমএ/এএন