সমাজ কতটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ইমামকে পর্যন্ত পালাতে হয়: তাজুল ইসলাম
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, একটা দেশের সমাজ কতটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, কতটা পচে গেলে সরকারের পরিবর্তনের সাথে সাথে একটা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে পালিয়ে যেতে হয়, মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যকে পালাতে হয়, গোটা সংসদকে পালাতে হয়, গোটা পুলিশ বাহিনীকে পালাতে হয়, প্রত্যেকটা থানা থেকে পুলিশকে চলে যেতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে পালাতে হয়, মাদরাসা ও স্কুল-কলেজের সভাপতিকে পালাতে হয়, শেষ পর্যন্ত মসজিদের ইমামকে পর্যন্ত পালাতে হয়। একটা দেশকে কতটা দূষিত করা হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এটা বুঝতে হবে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দেওয়ানগঞ্জের সানন্দবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সভাকক্ষে সানন্দবাড়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নাই। অতীতে এ ট্রাইব্যুনালে নিরীহ মানুষকে মিথ্যা অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান ট্রাইব্যুনাল সঠিক ও নিরপেক্ষ বিচার করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে শাসকদের পতন হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হয়েছে। কিন্ত এবার ২০২৪ সালে যে নজির সৃষ্টি হয়েছে, ইতিহাসে দ্বিতীয় নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা চাই না ভবিষ্যতে এমন ইতিহাস বাংলাদেশে আর রচিত হোক।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, রিপাবলিক শব্দটি অনেক গভীর অনেক বড়। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকে জনগণের ইচ্ছাটাই বড় কথা এবং জনগণের ইচ্ছাতেই সরকার নির্বাচিত হবে। জনগণ যেভাবে চাইবে সেভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। রাষ্ট্রে ভোট দেওয়ার বিধান থাকলেও একের পর এক সংসদ নির্বাচন হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে, উপজেলা নির্বাচন হয়েছে, মেয়র নির্বাচন হয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। যে সংবিধান আপনাকে আপনার ভোটের অধিকার দিতে পারে না, অথচ লেখা আছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক হবে। সেই ইনস্টিটিউশন সমাজ এবং রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম নয়। যেই প্রশাসন হওয়ার কথা ছিল নাগরিকের, সেই প্রশাসন এমন পর্যায়ে ঠেকেছিল যে একজন বিসিএস কর্মকর্তা তাকে কেন স্যার বলা হচ্ছে না, সেজন্য নাগরিককে গ্রেপ্তার করছে, হয়রানি করছে, মারধর করছে। এই যে মাইন্ডসেট হয়েছে, আমি সরকারি কর্মকর্তা মানেই আমি জনগণের মালিক হয়ে গেছি। এটা দেশের কত বড় যে ভ্রান্তি, এটা যে রাষ্ট্রের ক্ষতি, সেটা বুঝা যায় তাদের আচরণ দেখে।
পুলিশের আচরণ নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ হওয়ার কথা জনগণের সবচেয়ে কাছের মানুষ। গোটা দুনিয়ার যে প্রান্তেই যান, বিশেষ কিছু দেশ ছাড়া পুলিশ মানেই হচ্ছে জনগণের বন্ধু। সেই পুলিশকে দেখলেই মানুষ ভয়ে পালিয়ে যায়, কোনো ঝামেলা আবার আসছে। সেই পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই আপনাকে গ্রেপ্তার করছে, আপনাকে গুম করছে, বছরের পর বছর, আট বছর, দশ বছর গোপন কারাগারে আটকে রাখছে। অথচ আমাদের দেশে একটা সুপ্রিম কোর্ট আছে, একটা সংবিধান আছে, বিচার বিভাগ আছে, আইন বিভাগ আছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। এই রাষ্ট্রের পুরো কাঠামো ধসে পড়া ছিলো, এই রাষ্ট্র কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারে না। যদিও এই রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছিল ১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে, সেই রাষ্ট্র ৫৩ বছরে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, বরং একটা নিপীড়ক সমাজে পরিণত হয়েছে।
অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, সহকারী অ্যটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ তারিক উল ইসলাম, জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমান উল্লাস আকাশ, অ্যাডভোকেট গোলাম নবী, অ্যাডভোকেট শওকত আলী প্রমুখ।