একই মাঠের একই উইকেটে খেলা। খেলার চিত্রও ছিল প্রায় একইরকম। শুধু বদলে গেল দুই দলের অবস্থান। শারজাহতে দিন আর রাতের পার্থক্য প্রথম ম্যাচে টের পেয়েছিল বাংলাদেশ, এবার সেই তেতো অভিজ্ঞতা হলো আফগানিস্তানেরও। সিরিজেও তাই ফিরে এলো সমতা।
শারাজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোববার আফগানদের ৬৮ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। ২৫৩ রানের লক্ষ্যে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ রানে গুটিয়ে যায় আফগান ইনিংস।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা ৭ ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়।
বিজয়ী দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন শান্ত। বাংলাদেশের ১৪৯তম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া জাকের ২৭ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান।
৮.৩ ওভারে ১ মেডেনসহ ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন দলে ফেরা নাসুম আহমেদ। দুটি করে শিকার ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান, একটি করে তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম।
আফগান ইনিংসে চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদ প্রথম আঘাত হানার পর ভালো বোলিং করেও মিলছিল না উইকেটের দেখা। বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসুম আহমেদ। স্কয়ার লেগে বৃত্তের অনেকটা ভেতরে দাঁড়ানো মিরাজ দারুণভাবে লাফিয়ে চমৎকার ক্যাচ নেন। ৫১ বলে ৫ চারে ৩৯ রান করে ফেরেন সেদিকউল্লাহ আটাল। ভাঙে ৫২ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
এরপর হাশমতউল্লাহ শহিদি ও রহমত শাহ মিলে যোগ করেন ৭৭ বলে ৪৮। মোস্তাফিজুর রহমানকে পুল করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে শরিফুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হাশমতউল্লাহ, ৪০ বলে ১৭ রান করে।
পরের ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে রানের খাতা খুলতে দেননি নাসুম আহমেদ। একই ওভারে রান আউট হন রহমত। আফগান ইনিংসে ৭৬ বলে ৫ চারে সর্বোচ্চ ৫২ রান এই টপ অর্ডারের।
ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ নবি ও গুলবাদিন নাইব যোগ করেন ৪১ বলে ৪৪। শরিফুল ইসলামের করা বলে এক্সট্রা কাভারে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৫ বলে ২৬ রান করা নাইব।
পরের ওভারে নবিকে (২৫ বলে ২৬) ফেরান মিরাজ। খারোতের উইকেটও যায় মিরাজের ঝুলিতে। রশিদ খানকে তুলে নেন মুস্তাফিজ। আর গজনফরকে বোল্ড করে তুলির শেষ আঁচড় টানেন নাসুম।
এর আগে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু পান স্বীকৃত ব্যাটারদের প্রায় সকলেই। কিন্তু ফিফটি করতে পারেন কেবল নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ দিকে কিছুটা প্রত্যাশার দাবি মেটান অভিষিক্ত জাকের আলি। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
টসে জিতে ব্যাটে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হতে হতেও হয়নি। ২৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ ফেরেন আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ১৭ বলে ২২ রান করে।
দ্বিতীয় উইকেটে ৯৩ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও শান্ত। সৌম্যকে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন রশিদ খান। ভিডিও রিপ্লেতে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বলটি লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছে। রিভিউ নিলে ফিরতে হতো না সৌম্যকে। নন স্ট্রাইক প্রান্তে থেকেও ব্যাপারটা ধরতে পারেননি শান্ত!
তৃতীয় উইকেটে আরেকটি ফিফটি জুটিতে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক। ৮৩ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়ে মিরাজ রশিদের বলে বোল্ড হন ৩৩ বলে ২২ রান করে।
তাওহীদ হৃদয় (১৬ বলে ১১) আউট হন থিতু হয়ে। পরপরই ফেরেন শান্ত। ১১৯ বলে ৭৬ রানের ম্যাচসেরা ইনিংসটি অধিনায়ক সাজান ৬ চার ও ১ ছক্কায়।
খারোতের একই ওভারে ফেরেন মাহমুদউল্লাহও (৩)।
সপ্তম উইকেটে ৪১ বলে ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন অভিষিক্ত জাকের আলি ও রিশাদ হোসেনের জায়গায় দলে ফেরা নাসুম আহমেদ। ২ ছয় ও ১ চারে ২৪ বলে ২৬ রান করেন নাসুম। শেষটা টানেন জাকের।
খারাতে ৮ ওভার বোলিং করে ২৮ রানে নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন গজনফর ও রশিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫২/৭ (তানজিদ ২২, সৌম্য ৩৫, শান্ত ৭৬, মিরাজ ২২, হৃদয় ১১, মাহমুদউল্লাহ ৩, জাকের ৩৭*, নাসুম ২৫, তাসকিন ২*; ফারুকি ৭-০-৬৯-০, গাজানফার ১০-০৩৫-২, নাবি ১০-০-৪৯-০, নাইব ২-০-১০-০, ওমারজাই ৩-০-২৩-০, রাশিদ ১০-০-৩২-২, খারোটে ৮-০-২৮-৩)
আফগানিস্তান: ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ (গুরবাজ ২, সেদিকউল্লাহ ৩৯, রেহমাত ৫২, শাহিদি ০, নাইব ২৬, নাবি ১৭, রাশিদ ১৪, খারোটে ৪, গাজানফার ১, ফারুকি ০*; শরিফুল ৮-০-৪৫-১, তাসকিন ৬-১-২৯-১, মিরাজ ১০-১-৩৭-২, মুস্তাফিজ ৮-০-৩৭-২, নাসুম ৮.৩-০-২৮-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৭-০)
ফল: বাংলাদেশ ৬৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: নাজমুল হোসেন শান্ত।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ২ ম্যাচ শেষে ১-১ সমতা।