৬ মাস ধরে জামালপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার বন্ধ
চিকিৎসা সরঞ্জাম, অস্ত্রোপচারের আধুনিক কক্ষ সবই আছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অস্ত্রোপচারের আগে যিনি ‘অ্যানেসথেসিয়া’ প্রয়োগ বা অচেতন করেন, সেই অবেদনবিদ নেই। এতে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে জামালপুর সদর উপজেলার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার (সিজার) বন্ধ রয়েছে। অথচ এই কেন্দ্রে প্রতি মাসে গড়ে ৩০টি অস্ত্রোপচার হতো। এ অবস্থায় এলাকার দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে জেলা শহরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। দ্বিতীয় তলায় অস্ত্রোপচারের কক্ষ। তবে কক্ষটি তালাবদ্ধ। কেন্দ্রের একজন নার্সের সহযোগিতায় তালা খোলা হয়। দেখা যায়, সেখানে অস্ত্রোপচারের জন্য সব সরঞ্জাম রয়েছে।
জামালপুর শহরের জিগাতলা এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহিলা আক্তার (২৫) কেন্দ্রের চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও সেবায় খুশি। কিন্তু এই শেষ সময়ে তাকে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।
মিজানুর রহমান বলেন, ওই কেন্দ্রে বিনামূল্যে অনেক ভালো সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সুবিধা না হওয়ায় এখন বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হবে। এতে তার অন্তত ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। এখন এত টাকা জোগার করতে তাকে হিমশিম খেতে হবে।
শহরের লাঙ্গলজোড়া এলাকার মুক্তা খাতুনের সন্তান প্রসব হতে এখনো কিছুটা সময় বাকী। তবে যদি অস্ত্রোপচার করাতে হয়, সেই ক্ষেত্রে তিনি কী করবেন, চিন্তায় আছেন। মুক্তা খাতুন বলেন, ‘দেখেন, কত মায়েরা আসছেন। বিনামূল্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন সিজার করাতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে করাতে হচ্ছে। আর এই সিজারের খরচ জোগানো অনেক কষ্টকর।’
মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী এলাকার পূর্ণিমা আক্তার জামালপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার করাতে আগ্রহী ছিলেন। পরে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। সব মিলিয়ে তার ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামালপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের এক নার্স বলেন, তাদের অস্ত্রোপচার কক্ষে সব ধরনের যন্ত্রপাতি আছে। গত বছরের মার্চে কেন্দ্রের অবেদনবিদ সোহরাব আলী অবসরে চলে যান। এরপর একজন ডিপ্লোমাধারী অবেদনবিদ দিয়ে অস্ত্রোপচারের কার্যক্রম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তিনিও গত বছরের জুলাই মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান। এর পর থেকে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ১৫ নভেম্বর একজন অবেদনবিদ যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আর এক দিনও কেন্দ্রে আসেননি। গড়ে প্রতি মাসে এ কেন্দ্রে ৩০টি অস্ত্রোপচার হতো।
কেন্দ্রটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ক্লিনিক) উম্মে হাবিবা বলেন, এই কেন্দ্রে অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন সেবায় কোনো টাকা লাগে না। ফলে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন শতাধিক অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মধ্যে যাদের কোনো সমস্যা থাকে তাদের বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করা হতো। কিন্তু প্রায় ৯ মাস ধরে তাদের অবেদনবিদ না থাকায় অস্ত্রোপচার হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মাজহারুল হক চৌধুরী বলেন, দ্রুত একজন অবেদনবিদ দেওয়ার জন্য তিনবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এসআইএইচ