৭ মাস বন্ধ পাবলিক লাইব্রেরি, নষ্ট হচ্ছে ৩৪ হাজার বই
দীর্ঘদিন ধরে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের উদ্যোগ না নেওয়ায় ৭ মাসের বেশি সময় ধরে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরের জুন মাস থেকে তালা ঝুলছে লাইব্রেরিতে। অযত্নে-অবহেলায় ৩৪ হাজার মূল্যবান বই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। লাইব্রেরির কর্মীদেরকেও ১৩ বছরের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাইব্রেরির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। পুরো ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ভবনের চারপাশে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, এলোমেলো পড়ে আছে চেয়ার–টেবিল ও আসবাবপত্র। চেয়ার-টেবিলের উপর ধুলার স্তর পড়েছে। আর লাইব্রেরির ভেতরে ছোট্ট একটি কক্ষের মধ্যে মূল্যবান বইগুলো বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে।
লাইব্রেরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু। ১৯৫৯ সালে পাবলিক লাইব্রেরির পুরো কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে জামালপুর শহরের বকুলতলা এলাকায় ২৯ শতাংশ জমিতে একতলা ভবন গড়ে ওঠে। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঠকদের আনাগোনায় মুখর থাকত লাইব্রেরিটি। লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩৪ হাজার বই আছে। বহুদিনের অচলাবস্থার পর লাইব্রেরিটি এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
লাইব্রেরির সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাযযাদ আনছারী বলেন, অর্ধশত বছরের পুরনো লাইব্রেরিটি শহরের সংস্কৃতি চর্চার একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠের আসর, বই পড়া, পত্রিকা পড়া, বইমেলাসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলত এখানে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ সালে সর্বশেষ একটি কার্যনির্বাহী কমিটি হয়েছিল। তারপর আর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে বছরখানেক আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেটার কার্যক্রম দেখা যায়নি। প্রায় সাত মাস ধরে লাইব্রেরিতে তালা ঝুলছে। সরকার যুগে যুগে জ্ঞানের প্রসার বাড়ানোর কথা বলে। তবে বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যায় না। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের মাধ্যমে লাইব্রেরিটি সচল করার দাবি জানান।
গ্রন্থাগারিক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অনেকটাই অসুস্থ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে লাইব্রেরিতে যাওয়া হয় না। আমি লাইব্রেরির কাজ ছেড়ে দিয়েছি। শুনেছি, লাইব্রেরি এখন বন্ধ। তবে অনেক দিনের বিদ্যুৎ বিল ও আমাদের বেতন বকেয়া আছে।’
লাইব্রেরির পিয়ন মো. দুদু মিয়া বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে লাইব্রেরিটিকে সন্তানের মতো দেখভাল করেছি। মাত্র দুই হাজার টাকা বেতনে চাকরিতে ঢুকেছিলাম। আগে অনেক জাঁকজমক ছিল। সব সময় মানুষের আনাগোনা থাকত। প্রায় ৩৪ হাজার বই আছে। আমাকে ১৩ বছর ধরে বেতন দেওয়া হয় না। তারপরও লাইব্রেরি দেখভাল করেছি। সাত মাস ধরে লাইব্রেরিটি পুরো বন্ধ রয়েছে। সব আশা ছেড়ে দিয়ে লাইব্রেরি থেকে চলে আসছি।’
এ ব্যাপারে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান বলেন, করোনার সময় লাইব্রেরিটির অচলাবস্থা শুরু হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিটি সচল করার সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ