নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল
৭ বছর ধরে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন বন্ধ, বিপাকে রোগীরা
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগে আক্রান্ত রোগীরা। প্রায় সাত বছর ধরে এই পরীক্ষার মেশিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বলে জানান রোগীরা।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, গাইনি চিকিৎসকের ১০৩ নম্বর কক্ষে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে বসে আছেন রাজিয়া খাতুন। হাতে একটি খামের ভেতর মেয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কয়েকটি রিপোর্ট। তিনি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের সালচাপুর গ্রামের বাসিন্দা। রাজিয়া খাতুন জানান, তার মেয়ে পারভিন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সকালে হাসপাতালে টিকিট নিয়ে গাইনি চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার কথা লিখে দেন।
রাজিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা নিরক্ষর মানুষ। কিছু বোঝার আগেই ডাক্তারের কক্ষের সামনে থাকা এক নারী আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা হাসপাতালে হবে না বলে জানান। পরে ওই নারী হাসপাতালের সামনের তার পছন্দের এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে আলট্রাসনোগ্রামসহ তিনটি পরীক্ষা এক হাজার ২০০ টাকায় করিয়ে দেন।’ আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন বন্ধ থাকায় রাজিয়ার মতো এভাবে অনেক রোগী প্রতিদিন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে কথা হয় শহরের জয়নগরের বাসিন্দা মাসুম উল হাসানের সঙ্গে। তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হবে। এ জন্য হাসপাতালের বাইরে থেকে বাড়তি টাকায় আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়েছে। এ সময় একই অপেক্ষমান আরেক রোগীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একটা আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই। নামেই শুধু আধুনিক হাসপাতাল। এটা আর কত টাকা লাগে। আসলে দেখার কেউ নেই।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে এই হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ জান্নাত আফরোজ নুপুর জানান, অন্তঃসত্ত্বা রোগীদের আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখতে হয় গর্ভে শিশু কী অবস্থায় আছে। তারপর পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান শাখা সূত্র আরও জানায়, গত জুলাইয়ে ৩৫ জন প্রসূতির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাদের সবাইকে বাইরে আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য প্রায় তিন গুণ টাকা গুনতে হয়েছে। আলট্রাসনোগ্রাম নষ্ট থাকায় এভাবে প্রায় সাত বছর ধরে প্রতিদিন বাড়তি টাকা গুনতে হয় রোগীদের।
এ বিষয়ে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ একরামুল হাসান বলেন, ‘আমি আসার অনেক আগে থেকে আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র বন্ধ রয়েছে।’
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩টি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। নতুন যন্ত্র আনার জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসআইএইচ