চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ কর্তৃক সংবাদকর্মীকে হেনস্তার অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ কর্তৃক সংবাদকর্মীকে হেনস্তা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
চুয়াডাঙ্গায় দুজন সংবাদকর্মীকে হেনস্তা করার কারনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শককে ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পত্র দিয়েছেন।
সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনাটিকে অত্যন্ত অনভিপ্রেত উল্লেখ করে তিনি আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্যও বলেছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘চুয়াডাঙ্গায় দুজন সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সুয়োমটোর বিষয় বস্তু উল্লেখ করা আছে, ‘রাষ্ট্রের পেশাদার শৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে মারধর এবং হেনস্তা বিষয়ক অভিযোগটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত।
পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের এমন কর্মকাণ্ডে দেশে-বিদেশে পুরো বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। উক্ত ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে।
এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিককে মারধর এবং হেনস্তা করার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিতকরণ এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার (২ জুন) রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে পারিবারিক বিবাদের অভিযোগ মীমাংসা করতে গিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মামুন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক নাসরিনের বিরুদ্ধে।
এসময় বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন শিমুল হোসেনকে মারধর, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পর পুলিশ পিকআপ ভ্যানে তোলা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং ডিবিসির চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিমকেও হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় পরদিন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির একমাত্র সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ তদন্ত কাজ শুরু করেন।
রবিবার রাত ৯টার দিকে শহরের সাতগাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার একটি পারিবারিক বিবাদের মীমাংসায় যায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাসরিন আক্তার সহ সঙ্গীয় ফোর্স। এসময় নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ডিবিসি নিউজের ক্যামেরা পারসন শিমুল হোসেন। পুলিশ সদস্যরা তার বাড়ির সামনে গিয়ে ওই অভিযুক্ত এক ব্যক্তির ব্যাপারে শিমুলের কাছে জানতে চান। শিমুল তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হেনস্তা করে পুলিশ কনস্টেবল শাহীন। তার কাছে টেলিভিশনের আইডি কার্ড দেখতে চায় পুলিশ কনস্টেবল।
এক পর্যায়ে বিষয়টি সদর থানার (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলীকে জানানো হলে আরও ক্ষুব্ধ হয় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা। সেই সাথে যোগ দেয় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন। এসআই মামুন ও এএসআই নাসরিনের নির্দেশে চিত্র সাংবাদিক শিমুলকে পিকআপ ভ্যানে তোলা হয়।
খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম। এসময় তিনি পিকআপ ভ্যানের ছবি তুলতে গেলে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এসআই মামুন। ভেঙে ফেলা হয় সাংবাদিকের ব্যবহৃত ফোনটি। পরে বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করলে ওই চিত্র সাংবাদিককে পিক-আপ ভ্যান থেকে নামিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পুলিশ সদস্যরা।
চিত্র সাংবাদিক শিমুল জানান, শুরু থেকেই অশালীন ব্যবহারে মারমুখী আচরণ করেন পুলিশ সদস্যরা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গালিগালাজের সাথে পিক-আপ ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে গিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তারা। স্থানীয় লোকজনও এর প্রতিবাদ করেন।
ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, প্রথমে পুলিশ সদস্যদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কথা থানার ওসিকে জানানো হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পুলিশ সদস্যরা। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আমাকেও হেনস্তা করা হয়। কেড়ে নেয় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সাংবাদিকদের কাছে সময়ও চান তিনি।
এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা আলোচনায় বসে পুলিশের এমন আচরণের নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এ ঘটনার সৃষ্ঠ তদন্ত করে বিচার দাবী করেছেন চুয়াডাঙ্গার গণমাধ্যমকর্মীরা।