প্রেমের টানে খুলনায় আসা অস্ট্রেলিয়ার চিত্রশিল্পী ম্যালকম মারা গেছেন
ছবি: সংগৃহীত
প্রেমের টানে প্রায় ২১ বছর আগে খুলনায় আসা অস্ট্রেলিয়ার চিত্রশিল্পী ম্যালকম আরনল্ড (৭৬) মারা গেছেন।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার মাদরাসা সড়কের একটি ভাড়া বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, সংবাদ পেয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। একইসঙ্গে অ্যাম্বাসিতে ডকুমেন্টস পাঠানো হয়েছে। অ্যাম্বাসি থেকে মরদেহ দাফনের অনুমতি দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। তারা স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে বসুপাড়া কবরস্থানে মরদেহ দাফন করবেন।
ম্যালকমের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাতের খাবার ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে তার ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পেয়ে দৌড়ে যান। তখন তিনি মুখের স্প্রে দিতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা ছিল তার।
হালিমা বেগম বলেন, আমার জন্য ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবার রয়েছে। আমি বলতাম আপনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। কিন্তু ম্যালকম বলতেন তুমি ছাড়া আমার খেয়াল কেউ রাখতে পারবে না। আমি এ দেশেই থাকবো। এমনকি মারা গেলেও এই দেশের মাটিতে আমাকে কবর দিও।
হালিমা বেগম আরও বলেন, আমি অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন বাংলাদেশে তাকে দাফন করলে সমস্যা নেই। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা অস্ট্রেলিয়া অ্যাম্বাসিকে জানিয়েছেন। সেখান থেকে অনুমতিও পেয়েছি। কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো সংগ্রহ করে বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হবে। তবে এখনো সময় নির্ধারণ করা হয়।
হালিমা বেগম বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর ছোট মেয়েকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের হয়ে কাজ করছিলাম। ২০০১ সালে ম্যালকম মোংলায় এলে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ নিয়ে বই লিখতে এসেছিলেন তিনি। তখন তার সঙ্গে আমার ২৫ মিনিট কথা হয়। তারপর তিনি চলে যান। আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে ২০০৩ সালে চিঠি পাঠালে তিনি এসে আমার চিকিৎসা করান। তিনি সবকিছু জেনে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তখন তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলি। তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। আমাদের বিয়ে হয় ২০০৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে তিনি আমার জন্যে বাংলাদেশে ছিলেন।