যশোরে মুখোমুখি বিএনপি-আওয়ামী লীগ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমাবেশ নিয়ে যশোরের মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উত্তেজনা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে শুক্রবার টাউনহল মাঠে সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
টাউনহল মাঠ না পেয়ে আজ শনিবার (২৭ মে) ভোলাট্যাংক রোডে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ করবে বিএনপি। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
যদিও প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। কিন্তু তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আসতে পারছেন না। তার পরিবর্তে আসছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
আজ শনিবার ভোলা ট্যাংক রোডে বিকেল ৩টায় সমাবেশ করবে বিএনপি। এদিকে একইদিন টাউনহল মাঠে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। একইদিন দু’পক্ষের সমাবেশ ঘিরে শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেই আতঙ্কের পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার টাউনহল মাঠের সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিএনপির আজকের সমাবেশ যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার কথা বলেন। তাদের এ ধরনের বক্তব্যে শহরবাসীর মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘২৭ মে যশোরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, সেসব অগ্নিসন্ত্রাসীর সমাবেশ করার কোনো অধিকার এই দেশে নেই।’ তারপর থেকেই বিএনপির সমাবেশ নিয়ে শহরে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘যশোরে গণসমাবেশ করবেই বিএনপি। কোনো হুমকি-ধমকি কিংবা গণগ্রেপ্তার এই সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না। এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৭ মে যশোরে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে জেলা কমিটি শহরের টাউনহল মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল প্রশাসনের কাছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিএনপিকে অনুমতি না দিয়ে একইদিন একটি আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপর দলটি জিলা স্কুল মাঠ কিংবা চৌরাস্তা মোড়ে সমাবেশ করার অনুমতি চায়। কিন্তু সে ব্যাপারেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ, ভোলাট্যাংক রোডে সমাবেশ করতে চায় দলটি।’
প্রশাসন ভোলাট্যাংক রোডে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সমাবেশ করতে না দেওয়ার ঘোষণার পর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের প্রেস ব্রিফিং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে শহরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সাজ্জাদ হোসেন নামে চারখাম্বা মোড়ের এক ব্যক্তি বলেন, ‘একইদিন ভোলাট্যাংক রোড ও টাউনহল মাঠের সমাবেশের কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে।’
টাউনহল মাঠে সমাবেশ আহ্বানকারী সম্মিলিত পেশাজীবী শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শেখ শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘কারো প্রতি আমাদের প্রতিহিংসা নেই। আমরা বিএনপির কর্মসূচি জানতাম না। এটি শ্রমিকদের প্রোগ্রাম, কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম না।’
একইদিন সমাবেশের ব্যাপারে বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবারই সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী। এখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। একইদিন দু’টি সমাবেশ হতেই পারে। তারা তাদের মতো করবে, আমরা আমাদের মতো করব।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘টাউনহল মাঠের সমাবেশের সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওটা সম্মিলিত পেশাজীবী শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত না। সবকিছু ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই।’
এসএন