গাইবান্ধার জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শায়হান আলীর যোগসাজশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ২৭টি পুকুরের পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের নামে ৪ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮ টাকার সম্পূর্ণই ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পানি সুপেয় করে মানুষের খাবার উপযোগীও করা হয়নি। অথচ টাকা তুলে খাওয়া শেষ। এই ভুয়া প্রকল্পটি নিয়ে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় শুষ্ক মৌসুম এলেই সেচ ও খাবার পানির চরম সংকট দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে পানির হাহাকার মেটাতে ওই এলাকায় জেলা পরিষদের ২৭টি পুকুরের পানি সুপেয় ও নিরাপদ করে এলাকার মানুষের খাবার পানি হিসাবে সরবরাহের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ লোক দেখানো এই ভুয়া প্রকল্পটি হাতে নেয়। বলা হয় এই ২৭টি পুকুর সংস্কার করে, পানি সংরক্ষণ ও খাবার উপযোগী করে শুষ্ক মৌসুমে মানুষের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহ করা হবে বিনামূল্যে।
এ জন্য পুকুরগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সংরক্ষণ করার কাল্পনিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুকুরগুলো সাঁওতাল পল্লীর পাশে হওয়ায় স্থানীয় আদিবাসী ও সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকার লোকজন এই প্রকল্পে বাধা দেয়ার সম্ভবনা আছে।কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গায়ে লাগাননি।
গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ স্থানীয় লোকজনের বাধা উপেক্ষা করে যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করে সেগুলো হলো গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী এলাকার পরিত্যক্ত রঘুনাথপুর পুকুর, আরজি পেয়ারাপুর পুকুর, মাকলাইন গুলেরপাড় পুকুর, পাকা মন্দিরপুকুর, চালিতা নয়াদীঘি পুকুর, তেরোইল পুকুর, কামদিয়া ডাকবাংলো পুকুর, রসিক নগর পুকুর, তেঘরা পুকুর, চেয়ারগাও কদমতলী, চেয়ারগাও খোলাহাটি, বড়গাও পুরাতন, খারিতা পুকুর, উথবি পুকুর, এনায়েতপুর ২, শাতাইন চুরা পালিপাড়া পুকুর, এনায়েতপুর ১, শিহিগাও পুকুর, বানিহারা পুকুর, চালিতা পুকুর, ধাওয়া চালিতা পুকুর, স্যামপুর পূর্বপাড়া পুকুর, বইল খাঁ পুকুর, ফেরুসা পুকুর, আশকুর পুকুর, আলিগাও পুকুর, মোল্লাপাড়া পুকুর।
প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী পুকুরের প্যারাসাইটিয়, গাছ লাগানো, চারপাশের বেড়া দেওয়া এবং পুকুরে পানি শোধন যন্ত্র স্থাপন করার কথা। কিন্তু কোনো পুকুরে এসব না করেই বিল তুলে নেওয়া হয়। এই পুকুরগুলো দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগসহ প্রভাবশালী এমপিদের দখলে ছিল। তারা মাছচাষ করতেন।
কিন্তু হঠাৎ করে মজা ও পচা পুকুরের পানি সংরক্ষণ করে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে নলকূপের বদলে পুকুরগুলোকে টার্গেট করা হয় তার নেপথ্য খুঁজে বের করা দরকার। কারণ সাড়ে ৪ কোটি টাকার প্রকল্প পুকুরে খচর করা হলো। কিন্তু সুপেয় পানি ও পানি সংরক্ষণ করাও হলো না কিন্তু কার স্বার্থে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পুকুর সংস্কারে ব্যয় করা হলো তা খতিয়ে দেখার দাবি স্থানীয়দের।
কারণ ২৭টি পুকুরের ১টি পুকুরও মানুষের কাজে আসছে না। এখনও পুকুরগুলোতে মৎস্য চাষই করা হচ্ছে। পানি সংরক্ষণও হচ্ছে না, পানি সুপেয় হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ সুপেয় পানি সরবরাহ ও সংরক্ষণের নামে ২৭টি পুকুরের নামে এই পরিমাণ টাকা খরচ দেখিয়ে ৪ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করলেন তা এখন সামনে এসেছে।
এদিকে গাইবান্ধার জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শায়হান আলীর যোগসাজশে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় । তিনি এই প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জানার জন্য গাইবান্ধার জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শায়হান আলীর ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।