মাগুরায় তীব্র তাপদাহে ঝরে পড়ছে লিচু
সপ্তাহজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। সেই সাথে প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির। আসছে গ্রীষ্ম মৌসুম। এই মৌসুমে মাগুরার সদরের ২০ গ্রামের লিচু সারাদেশ সমাদিত । সদরের হাজরাপুর, মিঠাপুর, হাজীপুর, রাঘবদাইড়, শিবরামরামপুর, মির্জাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের লিচু বাগানের প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। এ সময় মাগুরা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়তদারা লিচু কিনে তা বিক্রি করে আসছে। কিন্তু এবার অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহের ফলে বাগান থেকেই লিচু লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে । এখন লিচু একটু বড় হতে শুরু করেছে । এ সময় যদি একটু বৃষ্টি হয় তাহলে লিচুর ভালো ফলন হবে বলে জানিয়েছেন লিচুর বাগান মালিকরা।
মাগুরা সদরের মির্জাপুর গ্রামের লিচু চাষী রাজা হোসেন বলেন,আমার এবার ৪০০ লিচু গাছ রয়েছে । লিচু ফল আসা শুরু করলেই আমি গাছের পরিচর্যা বাড়াতে শুরু করি । প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্প্রে করি নিয়মিত । পাশাপাশি সেচের ব্যবস্থা করি । ফুল থেকে ফল আসলে গাছের পরিচর্যা আরো বাড়াতে থাকি । কিন্তু চলতি সপ্তাহে তীব্র তাপদাহের ফলে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি । গাছের লিচু লাল হয়ে ঝরে পড়ছে তা দেখে আরো ভেঙে পড়ি । ইতিমধ্যে আমার ৪০০ গাছের প্রায় ৪০ শতাংশ গাছের লিচু ঝরে গেছে । এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে গাছে সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছি । প্রতি আমার লিচু বাগান থেকে ৮ লাখ লিচু বিক্রি করি । কিন্তু এবার ফলন বিপর্যয়ের ফলে ৪-৫ লাখ টাকা বিক্রি হতে পারে আশা করছি ।
সদরের আলাইপুর গ্রামের কুদ্দুস বিশ্বাস বলেন,আমার ১০টি বাগানে এবার লিচু চাষ হচ্ছে । বর্তমানে প্র্রচণ্ড খরা,তীব্র তাপদাহের ফলে আমার কিছু বাগানের লিচু ঝরে যাচ্ছে । পার্শ্ববতী খালে তেমন পানি না থাকার ফলে নিয়মিত সেচ দিতে পারছি না । এখন প্রতিটি গাছের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পানি না থাকলে বাকী লিচু ঝড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই আগামী সপ্তাহের মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত না হয় তবে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে । যেখানে প্রতি বছর ৮-১০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হতো সেখানে তার অর্ধেকে নেমে আসবে ।
সদরের হাজীপুর গ্রামের আকিদুল জানান,হাজীপুরের লিচু সারাদেশে নামকরা । প্রতি বছর এই মৌসুমে আমাদের ব্যবসা ভালো। সারা বছরের মধ্যে আমরা এ মৌসুমের দিকে তাকিয়ে থাকি ভালো ব্যবসার জন্য । কিন্তু এবার ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপ প্রবাহ থাকার কারণে লিচু ঝরে যাচ্ছে । গত বছর এই সময় এত তাপদাহ ছিল না ফলে লিচুর বাম্পার ফলনে হয়েছিল । কিন্তু এবার বেশি তাপদাহের কারণে আমরা খুবই শঙ্কিত আছি । লিচুর রঙ যদি ভালো না হয় তবে লিচুতে বিপর্যয় হবে। আমরা বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছি । কিছু দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে কিছুটা ফলন ভালো হতে পারে ।
এ ব্যাপারে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন,মাগুরা লিচুর জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর মাগুরার এই লিচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে যায় । প্রায় ১০ কোটিরও বেশি টাকা আয় করে লিচু চাষীরা । কিন্তু এবার তীব্র তাপদাহের ফলে লিচু বাগানের কিছুটা ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে । কিছু কিছু লিচু বাগানের লিচু ঝরে যাচ্ছে শুনেছি । আমরা লিচু চাষীদের সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি । এখন নিয়মিত গাছের গোড়ায় পানি জমিয়ে রাখতে পারলে কিছুটা ফলন ভালো হবে ।
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৪০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এবার চায়না, মোজাফ্ফর, বোম্বায় ও হাজরাপুরী লিচুর জাত বেশি চাষ হয়েছে। আশা রাখছি আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে লিচু ফলন ভালো হবে।
এসআইএইচ