নড়াইলে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নড়াইলে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ফ্যাশন হাউজগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা। তবে ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে মানুষের ভিড়। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে এই ভিড় রাত ১১টা পর্যন্ত থাকে। প্রচণ্ড গরমের কারণে দিনের চেয়ে অনেকেই সন্ধ্যার পর মার্কেটে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
এদিকে নড়াইল সদর,লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা বাজারের বিভিন্ন সড়কের পাশে ছোট বড় দোকান ভাড়া নিয়ে ফ্যাশন হাউজ ও তৈরি পোশাকের দোকান দিচ্ছে নতুন নতুন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফ্যাশন হাউজ ও তৈরি পোশাক এবং জুতার দোকানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে নেই কসমেটিকস দোকানগুলো। ঈদকে সামনে রেখে এসব ফ্যাশন হাউজগুলোয় কেনাবেচার ধুম পড়েছে। গতবারের তুলনায় এবার দাম বেশি। তবে পোশাকে এসেছে বেশ বৈচিত্র্য। প্রতিষ্ঠানের সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন করেই মালিকরা শুরু করেছেন বেচাকেনা।
নতুন নতুন দোকান ইতোমধ্যে তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ছিট কাপড় ও তৈরি পোশাকের দোকানে সন্ধ্যার পরপরই ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে। ছিট কাপড়ের দোকানে পছন্দের পোশাক তৈরির জন্য দর্জিদের কাছে ভিড় করছে তরুণীরা। ব্যতিক্রম নেই জুতার দোকানগুলোতেও।
গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় নিম্নবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। অবশ্য নিম্নবিত্তদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে ফুটপাতে বেশ কিছু পোশাকের দোকান দিয়েছে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। বাজারের ভেতরের চেয়ে এসব মার্কেটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। দোকানিদের দম ফেলার ফুসরত নেই।
লোহাগড়া বাজারের কয়েকজন কসমেটিকসের দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গতবারের তুলনায় ক্রেতা বেশি, কেনাবেচাও বেশি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে কেনাবেচা বেড়েছে বলে জানান তারা।
নড়াইলের সুপার মার্কেট, ভুইয়া মার্কেট, মোল্যা মার্কেট, দিদার মার্কেট, রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি মার্কেট, মুক্তিযোদ্বা মার্কেটের দোকানগুলোতেও কেনাবেচা চলছে সমানতালে। এখানে সব বয়সের মানুষের পোশাকসহ অন্যান্য জিনিসের সমারোহ রয়েছে।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন বিপণিবিতানে বেড়েছে জুতা-স্যান্ডেলের বিক্রি। ছোট-বড় সবাই আসছেন সাধ্যের মধ্যে পছন্দমতো জুতা-স্যান্ডেল কিনতে। কারও কাছে মান ও দাম ঠিক থাকলেও কারও কাছে গতবছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে দোকানিরা বলছেন তারা যেভাবে কিনে এনেছেন সেভাবেই বিক্রি করছেন।
সদর উপজেলা বাজারে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তানিয়া বেগম নামে একজন বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মার্কেটে এসে বিভিন্ন দোকান ঘুরছি। সব দোকানেই শাড়ি, থ্রি-পিস এবং তৈরি পোশাকগুলোর আকাশছোঁয়া দাম। বেড়েছে জুতার দামও। এতে পোশাকসহ অন্যান্য সব কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
লোহাগড়া বাজারে প্যান্ট-শার্ট কিনতে আসা সাব্বির জমাদ্দার নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের কেনা-কাটা আগে থেকে মানুষ বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনিতে ঈদের কেনা-কাটা করার জন্য বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন। দোকানে লাইন ধরে জিনিস কিনছেন। পোশাক, কসমেটিকস ও জুতার দোকানে উপচে পড়া ভিড়।
কালিয়া বাজারের আশা গার্মেন্টসের মালিক আশরাফুল আলম আশা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচাকেনা ভালো। বাজারে সুতাসহ অন্যান্য মালের দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় পোশাকের দাম বেশি। ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পোশাকের দাম বেশি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের পর যখন নতুনভাবে মোকামে যাবো তখন দাম আরও বাড়তে পারে।
নড়াইল ফ্যাশন হাউজের মালিক মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার প্রচুর বিক্রির আশা করছেন তিনি। এবার পোশাকের নতুন নতুন কালেকশন এসেছে। কাপড়ের মূল্য ক্রেতা সাধারণের সামর্থ্যের মধ্যেই আছে। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা সমানতালে ভিড় করছেন মার্কেটে। পোশাকের পাশাপাশি কসমেটিকস দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমাদের নিয়মিত টহল পুলিশ কাজ করছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও বাজারে রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে পুলিশ।
এসজি