চান্দেশ্বর অফিস ছেড়ে গেলেও কাটেনি বাঘ আতঙ্ক

সুন্দরবনের চান্দেশ্বর অফিস প্রাঙ্গনে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান নেওয়া তিনটি বাঘ ফিরে যাওয়ায় বনরক্ষীসহ জেলেদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে মানুষগুলোর এখনও সেই বাঘের ঘোর কাটেনি। তাই এখনও শঙ্কিত সংলগ্ন এলাকার মানুষ। বাঘ সেই বিচরণ ভাইরাল হওয়ায় পর এখনও কৌতুহল রয়ে গেছে জনমনে।
যে প্রশ্নগুলো মানুষের মনে ঘুরে ফিরছে তা হলো, নিভৃতচারী বাঘ সংঘবদ্ধ হয়ে জনসম্মুখে কেন এলো, কেন ২৪ ঘণ্টা যাবৎ অফিস পাড়ায় অবস্থান করলো, শনিবার বেলা ১০টার পর কোথায় গেলো, অফিস থেকে অনেক দূরে না দক্ষিণের নদীর ধারে? বাঘগুলো কি আবারও ফিরে আসবে, বাঘগুলো কি প্রজননের জন্য এসেছিল নাকি বনে বাঘ বেড়েছে তাই এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইত্যাদি।
প্রশ্নগুলো এখনও ভাবাচ্ছে রসুলপুর, রাজাপুর, দাসের ভাড়ানী, খেজুরবাড়িয়া, গুলিশাখালী, খুড়িয়াখালী, সোনাতলার মানুষকে। স্থানীয়রা জানান, গত পক্ষকাল আগে শরণখোলার সোনাতলা গ্রামে ঢুকে পড়েছিলো দুটি বাঘ। তারও কিছুদিন আগে বনসংলগ্ন ধানসাগর এলাকায় বাঘ এসে একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১০টার দিকে পুর্বসুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ ফারুক আহম্মেদ মোবাইল ফোনে জানান, আতঙ্ক কেটে গেলেও বাঘগুলোর চলাফেরা এখনও চোখের সামনে ভাসছে। গত শুক্রবার দুপুরে অফিস ক্যাম্পাসে হঠাৎ দুটি বাঘের দেখা পেয়ে ভীত হন তারা। ভয়ের সঙ্গে ছিলো কৌতুহলও। বাঘ দুটি সারা বিকেল পুকুর পাড়ে, রান্না ঘরে ঘুরে বেড়ায়। রাতে তাদের সঙ্গে যোগ হয় আরও একটি বাঘ।
তিনি জানান, ওই রাতে অফিস থেকে বের না হতে পেরে মুড়ি, বিস্কুট খেয়ে থেকেছেন। বর্তমানে বনরক্ষীরা স্বস্তিতে রয়েছেন। তবে হরিণ আর পাখি ডাকার শব্দে নিজেদের অজান্তেই চোখ দুটো চলে যাচ্ছে পুকুর পাড়ে এবং রান্না ঘরের ধারে।
চান্দেশ্বরে কর্মরত বনরক্ষী তরুণ মজুমদার জানান, দীর্ঘ বছর ধরে সুন্দরবনে চাকরি করলেও এর আগে একই সঙ্গে তিনটি বাঘের দেখা পাননি। তার ওপর বাঘ তিনটির ২৪ ঘণ্টা বিচরণ তাদের কাছে সুন্দরবন জীবনের সব চেয়ে বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
শরণখোলার সোনাতলা গ্রামের বনরক্ষা বিষয়ক কমিটি সিপিজির গ্রুপ লিডার খলিলুর রহমান জোমাদ্দার জানান, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তাই বনের মধ্যে একাধিক বাঘের বিচরণ দেখতে পাচ্ছেন পর্যটকরা। গ্রামেও প্রায়ই চলে আসছে বাঘ।
স্থানীয় ওয়াইল্ড লাইফ টিমের সদস্য আবুল আসলাম তুহিন জানান, এখন বাঘের প্রজনন কাল চলছে। তাই হয়তো বাঘ-বাঘিনী একসঙ্গে চলাচল করছে। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ অ্যাসিসটেন্ট সুফল রায় জানান, নিঃসন্দেহে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
যার প্রমাণ সুন্দরবন ভ্রমণ করলেই পাওয়া যাবে। বনের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক বাঘের দেখা মিলছে। তবে বনের চান্দেশ্বর অফিসে তিনটি বাঘের উপস্থিতি প্রজনন কেন্দ্রীক হতে পারে। যেহেতু এখন প্রজনন মৌসুম চলছে। সেখানের বনরক্ষীরা সুস্থ এবং স্বস্তিতে রয়েছেন।
এএজেড
