মুঘল আমলের বাইতুন নুর মসজিদ সংস্কারের দাবি গ্রামবাসীর

মাগুরার শালিখার গোপালগ্রামে শত বছরের স্মৃতি বহন করছে মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ, যা বর্তমানে বাইতুন নুর জামে মসজিদ নামে পরিচিত। প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি সংস্থারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল অনেক দিন । বর্তমানে স্থানীয় অর্থায়নে কিছুটা সংস্কার করে মূল মসজিদের চারপাশের কিছু অংশ বৃদ্ধি করে চলছে নামাজ পড়ার কাজ।
শালিখা সদর উপজেলার আড়পাড়া থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গোপাল গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটি ৬০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া । এই গ্রামের তৎকালীন সমাজ চিত্তক কলিম উদ্দিন শিকদার ওরফে বড় শিকদার ও কাতলী গ্রামের মুসলিম জমিদার হযরত শাহসুফি জমির উদ্দিন আহমদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মসজিদটি মুঘল সম্রাট আকবর নির্মাণ করেন বলে জানা গেছে ।
টালির ইটের তৈরি ৪০ ইঞ্চি পুরু দেয়ালের চারপাশে শিউলি,গোলাপ,পদ্ম,বিভিন্ন ফুল ও লতাপাতার কারুকার্য খোদায় করা আছে । মসজিদের ৪টি মিনারের ৩টিই ভেঙে পড়েছে । মূল মসজিদের ঘরের ২টি জানালাসহ ৩টি দরজার ২টিই অকেজো হয়ে আছে । মসজিদটিতে কোনো রঙের ব্যবহার করা হয়নি। ফলে এর গায়ে আরবি ও উর্দুতে লেখা ইসলামী গজলগলো ঝলসে যেতে শুরু করেছে । তবে মসজিদের ভেতরকার মেহরাব ও দেয়ালে অঙ্কিত কারুকার্য সংস্কারপূর্বক কার্যপোযগী করা হয়েছে ।
যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকতার ছোয়া লাগায় এখন আর গ্রামটি পিছিয়ে নেই । উপজেলা সদর থেকে পাকা সড়ক তৈরি হয়েছে কয়েক বছরে । শুধুমাত্র প্রাচীন নিদর্শনের এই মসজিদটি পুরো সংস্কার করে প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করছেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
মসজিদের মোয়াজ্জেম ইউনুস আলী বলেন,আমার পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শুনে আসছি মসজিদটি তারও আগে তৈরি হয়েছে । মসজিদটি কারা তৈরি করেছে এবং কখন তৈরি করেছে এ ব্যাপারে নিদিষ্ট কোনো তথ্য বলতে পারব
না। মুঘল আমলের এই মসজিদটি আমাদের গ্রামের গর্ব । বর্তমানে মসজিদের বিভিন্ন অংশে সংস্কার করা খুবই জরুরি । সরকারিভাবে যদি এটি যথাযথ সংরক্ষণ করা হতো তাহলে ভালো হতো । কারণ দূর-দূরান্তের অনেক দর্শনার্থী এই গ্রামে আসে মসজিদটি দেখতে ।
গোপাল গ্রামের একজন হাফেজ মাওলানা হাসিবুল ইসলাম জানান, এই মসজিদটি দীর্ঘ কয়েক শো বছরের প্রাচীন মসজিদ । শুনেছি এটা মুঘল আমলে তৈরি হয়েছে । প্রাচীন এই মসজিদটি নিয়ে আমাদের গ্রামের মানুষের নানা কৌতুহল রয়েছে । আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায় করে।
এ ব্যাপারে গোপাল গ্রামের ইউপি সদস্য সাহাজান সাবু বলেন,মুঘল আমলের এই মসজিদটির সঙ্গে গ্রামের মানুষের অনেক স্মৃতি বহন করে। এই মসজিদ নিয়ে রয়েছে নানা গল্প ,নানা মত। মসজিদটি অনেক পুরাতন ,কয়েক পুরুষের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এখানে। এ মসজিদে গ্রামের শিশুদের আরবি শিক্ষা দেওয়া হয়।
সরকরি কোন সহযোগিতা পেলে মসজিদটি আরো আধুনিকরুপে গড়া যেত । তাই এ মসজিদটি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি সংস্কার একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এসআইএইচ
