নতুন বই পায়নি মাগুরার ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী
এক মাস পেরিয়ে গেলেও মাগুরায় চলতি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী শতভাগ বই পায়নি। জেলায় এ বছর চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে বই পেয়েছে ৭৫ শতাংশ। ফলে ২৫ শতাংশ বই এখনো পায়নি কোন শিক্ষার্থী। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এ বছর শতভাগ বই দেওয়া হলেও তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে শুধু তিনটি বই।
জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ক্লাস। ফলে বাকী ৩টি বই না থাকাতে পাঠদান হচ্ছে ব্যাহত। চলতি শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে দেয়া হয়েছে ইংরেজি,বাওবি ও ধর্ম। বাকী ৩টি অর্থাৎ বিজ্ঞান,বাংলা ও গণিত বই না থাকায় শিক্ষার্থী পড়েছে বিপাকে।
জেলায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রাথমিকসহ কেজি স্কুল গুলোতে ক্লাস চলছে পুরোদমে। কিন্তু তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বাকী ৩টি বই না থাকায় শিক্ষকরা গত ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বই দিয়েই ক্লাস নিচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী পরানো বই সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পুরানো বই সংগ্রহ কওে ক্লাস করতে পারছে না। ফলে অভিভাবকরা দিন দিন উদিগ্ন হয়ে পড়ছেন। তাদের প্রশ্ন কবে বই আসবে, কবে এর সমাধান হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১ম ও ২য় শ্রেণিতে জেলায় শতভাগ শিক্ষার্থীও হাতে বই তুলে দেওয়া হয়েছে। অথ্যাৎ ১ম ও ২য় শ্রেণিতে বইয়ের কোন সংকট নেই। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ইংরেজি,বাওবি ও ধর্ম বই দেওয়া হয়েছে। বাকী ৩টি বই না আসায় এখনো কোন শিক্ষার্থী তা পায়নি। কবে আসবে এ ৩টি বই তা তাদের জানা নেই।
অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছর ৩য় শ্রেণিতে বইয়ের বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৯৬ টি, এর মধ্যে বই প্রাপ্তি হয়েছে ৫৮ হাজার ৬৩৮টি, ৪র্থ শ্রেণিতে বইয়ের বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৮০টি, বই প্রাপ্তি হয়েছে ৫৯ হাজার ৭টি অপর দিকে ৫ম শ্রেণিতে বইয়ের বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ১২ হাজার ৩৩২টি ,এর মধ্যে বই প্রাাপ্তি হয়েছে ৫৩ হাজার ৪১৬টি। তারা দাবী করছে এ বছর জেলায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীও হাতে বই তুলে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক জানান,প্রাথমিক স্তরে শতভাগ বই না আসায় আমাদের পাঠদান দারুন ভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে ৩টি বই। ফলে বাকী ৩টি বই না আসায় আমাদেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
আমরা গত বছরের ২০২২ শিক্ষাবর্ষেও বই দিয়ে পাঠদান করাচ্ছি। আবার পড়া দিতে পারছি না ফলে অনেক শিক্ষার্থীও বই না থাকাতে বাড়ীতে পড়তে পারছে না। গত বছর জানুয়ারি মাসেই সব বই এসে ছিল ফলে পাঠদানে কোন বাধা পায়নি। কিন্তু এবার বছরের শুরু হোচট খেল কোমল মতি শিক্ষার্থীরা। কবে আসবে বই আমাদেও জানা নেই।
মাগুরা ৩ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুদ্র জানান, বই পেয়েছি ৩টি। ক্লাস হচ্ছে ৬টি। স্যাররা ৬টি বইয়ের পড়া দিচ্ছে। ফলে আমার বাকী ৩টি বই না থাকাতে বাড়ীতে পড়তে পারছি না। আবার ১ মাস পার হয়েছে কিন্তু বই আসছে না। আমাদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে।
মাগুরা অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুভেচ্ছা প্রিপারেটরি স্কুলের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া ইসলাম মীম বলেন, স্কুল থেকে ৩টি নতুন বই দিয়েছে আর বাকী ৩টি বই দিয়ে পুরানো। তার আবার ছেড়া। আমাদের ক্লাস হচ্ছে পুরোদমে। বাকী নতুন ৩টি বই কবে পাব জানি না।
স্কুল অভিভাবক সারোয়ার ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। চলতি বছরে সে বই পয়েছে ৩টি। বাকী তিনটি বই না পাওয়াতে স্কুলে ও প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে বইতে সমস্যা হচ্ছে। ১ মাস পেরিয়ে গেলেও বইয়ের কোন ঠিকানা নেই। কবে আসবে বই, কবে হবে এর সমাধান জানি না।
অভিভাবক সোহেলী সুলতানা জানান, আমার ছেলে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে পুরোদমে ক্লাস চলছে। কিন্তু সে চলতি বছর বই পেয়েছে ৩টি। বাকী ৩টি বই আমি সংগ্রহ করতে পারিনি ফলে ছেলেকে পড়াতে পড়েছি বিপাকে।
মাগুরা সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার বজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, মাগুরা সদর উপজেলায় ১ম ও ২য় শ্রেণিতে শতভাগ বই দিয়েছে। ৩য় ও থেকে ৫ম শ্রেণিতে বই দেওয়া হয়েছে ৩টি করে। বাকী ৩টি বই এখনো আসেনি। চলতি মাসের মধ্যে আশাকরি বাকী ৩টি বই এসে যাবে। আমরা বই হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই স্কুল গুলোতে পৌছে দেব।
মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, চলতি বছর জেলার ৫০৩টি সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৫ শতাংশ বই দেওয়া হয়েছে। বাকী ২৫ শতাংশ বই আমরা এখানো পায়নি। তবে আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই বাকী বই গুলো হাতে পাব।
তারপরই আমরা বিতরণের কাজ শুরু করবো। প্রাথমিকে ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে ৩টি। ফলে তাদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা তাদের বইগলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌছে দেব।
এএজেড