আজও নড়াইলে গড়ে উঠেনি বিসিক শিল্পনগরী
স্বাধীনতার ৫১ বছরেও নড়াইলে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠেনি । অনুকূল পরিবেশ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নড়াইলে বিসিক শিল্পনগরী না থাকায় এই জেলায় আজও উল্লেখযোগ্য কোনো ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। ইতিমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে নড়াইল, মাগুরা ও বান্দরবান জেলা বাদে ৬১টি জেলায় বিসিক
শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে।
স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও নড়াইলে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে না উঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে আশার বাণী হলো এই যে ৩৫০ একর জায়গাজুড়ে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুত এই জেলায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ১৯৮৪ সালে নড়াইল জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় । এর তিন বছর পর ১৯৮৭ সালে জেলায় বিসিকের কার্যক্রম শুরু হয় । এর পরের বছর ১৯৮৮ সালে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের লক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। সে লক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি (ইন্টারনাল মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশন) বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ আন্ত মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের কমিটি পরিদর্শনে এসে শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নড়াইল-মাগুরা সড়কের রঘুনাথপুর মৌজায় ১৫ একর জমি নির্বাচন করে এবং ১৯৯০ সালের ১১ জুন ভূমি মন্ত্রণালয় জমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওই সময় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে টাকা ছাড় না পাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর ৮ বছর পর ১৯৯৮ সালে বিসিকের খুলনা কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালকসহ চার সদস্যের একটি টিম নড়াইলে এসে নতুন করে নড়াইল শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে চিত্রা নদীর অপর পাড়ে বোড়াবাদুরিয়া-সীমাখালি মৌজার ১৫ একর জমি নির্বাচন করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ লক্ষ্যে জমি হুকুম দখলের জন্য বিসিক ২০০১ সালের ২৮ আগষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠালেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে জেলা প্রশাসক ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর শিল্পনগরীর স্থান পরিবর্তনের জন্য বিসিকের ঢাকা কার্যালয়ের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠান।
এরপর প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের নড়াইল-যশোর সড়ক সংলগ্ন বাশভিটা নামক স্থানে সাবেক নড়াইলের উপ-ব্যবস্থাপক জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে স্থান নির্ধারণ করেন এবং ১৫ একর জমি ক্রয়ের সুপারিশ পাঠান। বিভিন্ন কারণে এই জমিতেও (বাশভিটা নামক স্থানে) বিসিক গড়ে তোলার জন্য বাধা দেন স্থানীরা। পরে ২০২১ সালে বিসিকের চেয়ারম্যান নড়াইল পরিদর্শনে এসে শহরের ধোপাখোলা এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসককে ৩৫০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিলে ধোপাখোলা এলাকায় চিত্রা নদীর কোল ঘেঁষে নড়াইল-ফুলতলা-খুলনা সড়কের দুই পাশে উজিরপুর মৌজায় ৩৫০ একর জায়গা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, পদ্মা সেতু এবং কালনা সেতু নির্মানের ফলে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব হয়েছে মাত্র ১২৬ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ভৌগলিকভাবে নড়াইল জেলার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। নড়াইলে সরকারিভাবে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। নড়াইলে সড়ক ও নৌ-পথে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে । কাঁচামাল সরবরাহসহ এই জেলায় রয়েছে প্রচুর জনশক্তি । শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোক্তাও রয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র জায়গার অভাবে তারাও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারছেন না। অবিলম্বে জায়গা নির্ধারণ করে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের দাবি তাদের।
এ প্রসঙ্গে নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান জানান, এখন নড়াইল অনেক সম্ভাবনাময় একটি জেলা । ইতিমধ্যে এই জেলাতে অনেক ছোট-বড় ব্যাবসায়ীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন্য জমি কিনতে শুরু করেছেন। বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠলে এই জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে । এ জেলার অনেক ব্যবসায়ী আছেন তারাও এখানে আসবেন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য।
নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন জানান, নড়াইলে বিসিক
শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দ্রুত বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হবে। এখানে বিসিক
শিল্পনগরী গড়ে উঠলে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, বিসিকে সম্ভাব্যতা জরিপের রিপোর্ট হয়ে গেছে। আশা করছি খুব শীগ্রই এটি বিসিক হেড অফিস থেকে প্রস্তাবনা আকারে প্ল্যানিং কমিশনে যাবে। এখানে বিসিক স্থাপন হলে খুলনা অঞ্চলে তথা নড়াইলবাসীর ভাগ্যের মান উন্নয়ন হবে।
এসআইএইচ