পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক
মোংলায় গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে খোদ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মোংলা শাখায়। গ্রাহকের লিখিত অভিযোগের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। কি করে হলো, কেনইবা হলো চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাস, ছাড় পাবে না অভিযুক্তরা, গ্রাহকরা ফিরে পাবে সর্বাধিক সেবা। যারা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
মোংলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে ও পৌরসভার এলাকার বেশীর ভাগ গ্রাহকই এমন সমস্যায় পড়েছে। সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তি বাবদ প্রায় কোটি টাকার সমস্যা দেখা দিয়েছে। অবশ্য শাখা ব্যবস্থাপক বলছেন, মোংলা উপজেলায় ১৭০টি সমিতিতে প্রায় ৮ হাজার সদস্য রয়েছে। তা সব সময় সঠিক ভাবে তদারকি করা সম্ভব নয়।
মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের মাঠ সহকারী বিপ্লব মজুমদার সদস্যদের কাছ থেকে বিনা রশিদে টাকা আদায় করে অফিসে জমা না করে পাশবই ৩ বছর তার কাছে আটকে রাখার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ৯ জন গ্রাহক লিখিত আবেদন করেন। এর পরে কিছু টাকা জমা করে মাঠ সহকারী বিপ্লব মজুমদার।
লিখিত অভিযোগের বাইরে এই ইউনিয়নের আরও কয়েকজন সদস্য জানান, তারা টাকা জমা দিলেও মাঠসহকারী বিপ্লব টাকা অফিসে জমা করেননি। এ বিষয় শাখা ব্যবস্থাপককে জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। এমন অভিযোগ রয়েছে চিলা, সুন্দরবন, মিঠাখালী, চাঁদপাই ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার গ্রাহকদের। এই সকল ইউনিয়নের গ্রাহকগন ব্যাংকের মোংলা শাখায় অভিযোগ করে কোন ফল না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলে বৃহস্পতিবার ২৫ জন গ্রাহক অফিসে জড় হয়ে অফিস ঘেরাও করেন।
ক্ষুব্দ সদস্যদের মধ্যে চাঁদপাই ইউনিয়নের গ্রাহকদের অভিযোগ সাবেক মাঠ সহকারী পাশবই নিয়ে আটকে রেখেছেন। তবে মাঠ সহকারী মোঃ শাহদুল ইসলাম দাবী করেন, আমাকে চাঁদপাই ইউনিয়ন থেকে চিলা ইউনিয়নে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আমি পাশবই তুলে অফিসে জমা করেছি।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের গ্রাহক শেফালী গোলদার জানান, আমি ১০ হাজার টাকা লোন হিসেবে নেই কিস্তু সেই টাকা পাশবইতে তোলা হয়নি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে গ্রাহক সুদীপ মন্ডল জানান, টাকা জমা দিয়েছি কিন্তু তা পাশবইতে তোলা হয়নি এবং পাশবইও পাচ্ছিনা। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে গ্রাহক মোঃ হালিম জানান, ২১ হাজার টাকা লোন নেই। সেই টাকা পরিশোধ করেছি। এখন পাশ বই ফেরত পাচ্ছিনা।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আরও কয়েকজন গ্রাহক জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলেমিশে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করছে। আমরা যখন বিষয়টি শাখা ব্যবস্থাপককে জানাই তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। তাই বাধ্য হয়ে ইউএনও স্যার কে জানিয়েছি। এখন পাশবই ও টাকা সুরসুর করে বের করে দিচ্ছে। তারা আরও দাবী করেন লোনের টাকার হারের অনুপাতে উৎকোচ না পেলে লোন বাড়ানো হয় না।
উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের গ্রাহক আয়শা বেগম জানান, তার নাম ৪৮০০ টাকা জমা আছে। এখন দেখছি আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আমার স্থলে মুজাহিদ শেখের নাম রয়েছে। মুজাহিদ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ব্যাংকের গ্রাহক হয়েছেন। আমি বিষয়টি অফিসকে জানিয়েছি কিন্তু কোন ফল পাইনি।
মোংলা উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা এসএম আনোয়ার উল কুদ্দুস জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মিঠাখালী ইউনিয়নের মাঠ সহকারী বিপ্লব মজুমদারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দেন। সেই অভিযোগ আমাকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে আমি বিষয়টি তদন্ত করছি। তবে অভিযুক্ত মাঠ সহকারী ইতোমধ্যে কিছু টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মোংলার শাখা ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার রায় জানান, সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক মাঠসহকারী মাসুদ শেখ বাগেরহাটের মোংলা ও ফকিরহাটে টাকা আত্মসাৎ করে। এ জন্য মাসুদ বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছে। এছাড়াও চাঁদপাই ইউনিয়নের সাবেক মাঠ সহকারী পাশবই গ্রাহকদের ফেরত না দেওয়া ও কিছু টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে গ্রাহকরা। তা এখন যাচাই বাচাই চলছে। এছাড়া আর কোন সমস্যা এই শাখায় নেই।
অন্য ইউনিয়নেও টাকা আত্মসাতে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে আপনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন। উপজেলায় কতজন গ্রাহকের কতো টাকা আত্মসাৎ হয়েছে তাও তিনি বলতে পারেন না। সুজিত দাবী করেন, মোংলা উপজেলায় ১৭০টি সমিতিতে প্রায় ৮ হাজার সদস্য রয়েছে। তা সব সময় সঠিক ভাবে তদারকি করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপংকর দাশ জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে গ্রাহকের সমস্যা কি তা শুনে ও যাচাই করে আমার দপ্তরে লিখিত ভাবে জানাতে শাখা ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২০২০ সালের পর থেকে কেন এই শাখাটি লস হচ্ছে তাও তদন্ত করে উদ্ধতন মহলকে জানানো হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করতে কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে আর্থিক ভাবে সাবলম্বি করতে ২০১০ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গঠন করেন। পরবর্তীতে এই প্রকল্প বন্ধ করে গঠন করেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। শুরু থেকে এই ব্যাংকের মোংলা শাখাটি লাভজনক থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলেমিশে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করার কারণে ২০২০ সাল থেকে লস করতে শুরু করে।
এএজেড