ভৈরব নদের মাটি কাটা হচ্ছে রাতের আধারে, প্রশাসন নীরব!
যশোরে ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদের পাড়ের যশোরের বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়া ও বোলপুর উত্তরপাড়া অংশের মাটি কেটে নিয়ে অর্থ বানিজ্য করছে একটি চিহ্নিত অসাধু চক্র। রাতের আঁধারে ট্রাক ট্রাক মাটি তুলে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করছে তারা। অনেক ক্ষেত্রে জোর করেও বৈধ সীমানার বালি মাটি নিয়ে যাচ্ছে তারা। নদীর দুই পাড়ের মানুষ এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই চক্রের কারণে।
আবার অব্যাহত মাটির গাড়ি আসা যাওয়ার কারণে রাস্তার ইটের সলিং ভেংগে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ঘটনায় জড়িত বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়ার আব্দুর রব ও বোলপুরের মুত্তার সিন্ডিকেট। অপ্রতিরোধ্য স্টাইলে মাটি বিক্রি করলেও ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয়রা জোর দাবি করেছেন প্রশাসনের কাছে।
বিশাল বাজেটের ভৈবব নদ ১০ কিলোমিটার খনন কাজ শেষ। এখন চলছে পাড় বাঁধার কাজ। দীর্ঘ ৩ বছর একটানা খননের কারণে ভৈরদের দুই পাড়ে মাটি বালির স্তুপ আকার ধারন করে। পাড়ের প্রয়োজনীয় মাটি রেখে দিয়ে বিগত সময়ে যে যার মত মাটি বালি নিয়ে গেছে। আবার নানা শ্রেণির লোকজন রীতিমত এই মাটি নিয়ে শুরু করে ব্যবসা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যশোরাঞ্চলের অনেকগুলো সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে ইতমধ্যে। এদিকে খননের সময় ভৈরবপাড় এলাকায় বসবাসকারী ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিচু জমি ও ডোবা ভরাট হয়ে যায়। আর একারণে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় উপকারভোগী হন অনেকেই। তাদের সীমানায় ভৈরব খননের বালি মাটিতে সমতল হয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়া ও বোলপুর উত্তরপাড়ার অংশের পাড় এলাকায় মাটি নিয়ে নতুন করে অর্থবাণিজ্য শুরু করেছে দুটি সিন্ডিকেট। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গার ওলিয়ার রহমানের ছেলে আব্দুর রউফ রীতিমত জোর কওে করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ভৈরব নদের মাটি ও বালিতে ভরাট হয়ে যাওয়া নিচু জমি ও ডোবা থেকে তিনি স্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে বিক্রি করছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক সেল্টার নিয়ে চলায় কেউ তার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। সীতারামপুর ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গায় ওই মাটি বিক্রি করছেন আব্দুর রব। এছাড়া প্লট ব্যবসায়ীদের সাথেও চুক্তি করে মাটি সরবরাহ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো অনুমতি না নিয়েই রাতের আঁধারে চলছে মাটি চুরির কারবার। একইভাবে বোলপুর উত্তরপাড়ার অংশ ভৈরবের মাটি জবরদোস্তি করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় মুক্তার সিন্ডিকেট।
ভৈরব খননের সময় স্বাভাবিকভাবে স্থানীয় মসজিদের নিচু জমি ভরাট হয়ে যায়। এতে মসজিদ উপকৃত হয়। স¤প্রতি ওই মাটির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি ফেলে স্থানীয় মুক্তা ও তার লোকজন ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। মসজিদের নিচু জমি সমতল হয়ে একটি ভাল দৃশ্যমান অবস্থানে আসলেও তা নষ্ট করছে ওই সিন্ডিকেট।
এখানেই শেষ নয়, আরো কয়েকটি স্পট থেকে বালি মাটি বিক্রি করে পকেট ভারি করছে ওই মুক্তার সিন্ডিকেট। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা এর প্রতিকার দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কাছে।
স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হালিম বিশ্বাস জানান, অভিযোগ সত্য। মালোপাড়া থেকে আব্দুর রব চক্র মাটি নিয়ে বিক্রি করছে বিভিন্ন জায়গায়। রাতের আঁধারে ওই মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বিশ্বনাথ বিশ্বাসের পরিবারসহ অনেকেরই আপত্তি আছে। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নেবেন। মাটি কাটা বা বিক্রির বৈধতা নেই।
তিনি ঘটনা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। নদের বোলপুরের মুক্তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অফিসে এসে অনেকে অভিযোগ করেছেন। মাটি বালি কেটে তুলে বিক্রিতে বাধা দিলে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
মাটি চুরির বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গা মালোপাড়ার আব্দুর রবকে জিঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, নদীর পাড়ের কিছু মাটি আমার ব্যবহারের জন্য নিয়েছি। তবে স্থানীয়দের নিষেধের পর থেকে ভৈরবের পাড় থেকে কোন মাটি আমি নিচ্ছি না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত স্পটগুলোর মাটি বিক্রির কোনো টেন্ডার হয়নি। কাউকে বিক্রি করার অনুমতিও দেয়া হয়নি। চক্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে মাটি বিক্রি করছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভৈরবের মাটি যারা বিক্রি করছেন বা যারা কিনছেন সবাই অন্যায় করছেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভৈরব নদের খনন শেষে পাড় কেটে মাটি চুরির বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএজেড