যশোরে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার বসতবাড়ি, জমি দখলের অভিযোগ
যশোরে যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের সরকার থেকে পাওয়া বসতবাড়ি ও জমি অবৈধভাবে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি মহলের বিরুদ্ধে। শহরের চাঁচড়া ৭৭ নাম্বার মৌজায় ১০ শতকের উপর এ/পি ৭৫বি ৭৩ নাম্বার বাড়ির একাংশ ৪ শতক জমি দখল করে বহিরাগত একটি পক্ষ বসবাস শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অবৈধভাবে দখল করে বশির উদ্দীন ও তার ভাই আব্দুর রশিদের পরিবারের সদস্যরা ওই অংশে বসবাস করছেন বলে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে বিচার দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। তবে দখলদার বশির উদ্দিন পক্ষের দাবি, তারা বৈধ কাগজপত্রের আলোকেই জমি ভোগ দখল করছেন। শুধু বরাদ্দপত্র হারিয়ে গেছে তাদের।
গণপূর্ত বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, সরকারি সম্পত্তির বৈধ ব্যবহারের প্রশ্নে বিরোধীয় জমি ও ঘর নিয়ে অভিযোগটির তদন্ত চলছে।
জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, রেলগেট মুজিব সড়কের যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক (পুলিশ গেজেট নাম্বার ৬৩) ১৯৭২ সালে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে উপরে উল্লেখিত জমি ঘর বরাদ্দ পান। বরাদ্দ পাওয়া টালির ঘরটি ১৯৮৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়ে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাকে কিছু টিন দেন। ভেঙে যাওয়া টালির ঘরটির পার্শ্বে টিন সেডের ৩টি কক্ষ তৈরি করেন।
ওই সময় হঠাৎ তাকে ঢাকায় বদলি করায় পরিবার রেখে তিনি ঢাকায় চলে যান। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে মৃত নাসির উদ্দীনের ছেলে বশির উদ্দীন ও মৃত গাউস বিহারীর ছেলে আব্দুর রশিদ বিহারী মুক্তিযোদ্ধা মালেকের পরিবারকে ঘর থেকে বের করে দেন। ঘরের জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দিয়ে টিন সেটের ৩টি কক্ষ বশির ও রশিদ ২ ভাইরা দখল করে নেন। বিষয়টি আব্দুল মালেক জানতে পেরে যশোরে এসে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেন। তার বদলিকৃত চাকরি হওয়ায় বেদখল হওয়া টিন সেড ঘর ৩টি উদ্ধার নিয়ে কাজ করতে পারেননি।
পরে আগের টালির ঘরটি কোনো রকম মেরামত করে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে ঢাকায় চলে যান তিনি। রশিদ বিহারী এবং বশির উদ্দীন ২ ভাইরা ভাই এসব করেও থেমে থাকেনি। ২০০৪ সালের মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ৩০/৪০ জনকে দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা করে টিভি ও আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে দরকারি কিছু কাগজপত্র নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে তারা বেড়া দিয়ে দখল করা অংশ ঘিরে নেন।
অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক আরো উল্লেখ করেন, রশিদ বিহারি ও তার ছেলে আব্দুর রহিম জনি ও বসির উদ্দীনের নামে যশোরে বিভিন্ন জায়গায় জমি ও বাড়ি আছে। এর পরও তারা মালেকের বরাদ্দ পাওয়া এ/পি ৭৫বি ৭৩ নাম্বার বাড়ির একাংশ দখল করে বহাল তবিয়তে বসবাস করছে তারা।
অভিযোগে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মালেক জেলা প্রশাসকের কাছে বলেন, তার নামে বরাদ্দকৃত এ/পি ৭৫বি ৭৩ নম্বর বাড়িটির একাংশর অবৈধ দখলদার আব্দুর রশিদ বিহারি ও বসির উদ্দীন। তাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। বৈধ কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তাকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার জন্য ১০ শতক জমি বুঝিয়ে দেওয়ার আাবেদন জানান।
এ প্রসঙ্গে খোঁজ নিতে গেলে আব্দুল মালেক জানান, তিনি সম্মুখ যোদ্ধা ছিলেন। পুলিশ গেজেট নম্বর ৬৩, বেসামরিক গেজেট নম্বর ৬৫৯, মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ৬৫৯, লাল মুক্তিবার্তা নামদার ৪০৫০১০৮৩৪ ও সনদ নম্বর ৮২৭৬৩। তিনি বছরের পর বছর দখলদার উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে এখন শয্যাশায়ী। তার পরিবারের উপর নানামুখী নির্যাতন করছে বশির উদ্দিন ও রশিদের সাঙ্গোপাঙ্গরা। নানা হুমকি মাথায় নিয়ে তার মেয়ে নাসিমা মালেক নিরু এখন জেলা প্রশাসক, গণপূর্তসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে হাঁটাহাঁটি করছে।
তিনি দাবি করেন, তার এবং তার পরিবারের প্রতি যেনো ন্যায়-বিচার করা হয়।
এদিকে অভিযুক্ত পক্ষের বশির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে জানা যায় যে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। দেখা হয় তার মেয়ে সেলিনা খামন ও জামাই আজগর আলীর সঙ্গে। তারা জানান, জবরদখল করা হয়েছে, এটা একেবারে অসত্য কথা। তার বাবা বশির উদ্দিন যশোর ইন্সটিটিউট স্কুলে চাকরি করতেন। তিনি বৈধভাবে ৪ শতক জমি ও ঘর বরাদ্দ পান। তারা নিয়মিত গণপূর্তে ঘর ভাড়া পরিশোধ করে আসছেন। সব কাগজপত্র হালনাগাদ তাদের আছে। শুধু বরাদ্দপত্রটি তাদের হারিয়ে গেছে। সেই ব্যাপারে তারা জিডিও করেছেন।
বশির উদ্দিনের ঢাকায় অবস্থান করা ছেলে বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, আব্দুল মালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা ভুল বলছে। তারা নানাভাবে হয়রানি করছে আমাদের। বশির উদ্দিনের সব কাগজপত্র সঠিক আছে। সরকারি জমি তারা আবেদন করে পেয়েছেন এবং বৈধ কাগজপত্রে দখলে আছেন। সেখানে তার অসুস্থ বোন, মা, এবং খালুর পরিবার থাকেন এবং সেটা অনেক আগে থেকেই।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ওই জমি ও ঘর সরকারি। গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের আওতায়। ওই জমি শুধু বসবাসের জন্য দেওয়া হয়েছিল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালককে। সেটা বেশ পুরনো। এরপর বশির আহমেদকে কোন কাগজপত্রের আলোকে দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করতে বলেছেন।
এসআইএইচ