জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নলকূপ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিষদের সদস্য থাকাকালীন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই টাকা আত্মসাত করেন তিনি। আত্মসাত করা টাকা ফেরত চাইলে ভুক্তভোগীদের নানাভাবে হয়রারি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদের সদস্য থাকাকালীন মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে টাকা দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করার।
এসব ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার ও পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সদর উপজেলার বাউখোলা এলাকার মৃত মোছেল উদ্দীন সরদারের ছেলে মতিয়ার রহমান। তবে অভিযোগ দায়েরের ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন মতিয়ারসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার শ্রীঊলা এলাকার লুৎফর গাজীর ছেলে নুরুল হুদার কাছে ব্যবসার ২০ লাখ টাকা পেতেন মতিয়ার রহমান। তবে মতিয়ারের পাওনা টাকা দিতে নাজমুল অপারগতা প্রকাশ করলে আদালতে একটি মামলা করেন মতিয়ার। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ নুরুল হুদা মামলা থেকে রেহাই পেতে জেলা পরিষদের দারস্থ হন। ওইসময় শান্তিপূর্ণ ভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা পরিষদের সদস্য মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে জেলা পরিষদের প্যাডে মতিয়ারের অগোচরে নুরুল হুদার থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন মনিরুল। একপর্যায়ে মতিয়ার তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে মনিরুল টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে মতিয়ারকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এতে, উপায়ন্তর না পেয়ে জীবনের নিরাপত্তা ও পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সাতক্ষীরা সদর থানায় মনিরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী মতিয়ার রহমান জানান, নুরুল হুদার থেকে টাকা আদায়ের কথা বলে জেলা পরিষদের সদস্য থাকাকালীন আমাদের কাছে থাকা নুরুল হুদার সাদা চেক আমার স্ত্রীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন মনিরুল। চেক গ্রহণের কিছুদিন পর মনিরুল আমাদের জানাই চেকটি হারিয়ে গেছে। ওইসময় চেক হারানোর বিষয়ে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। অথচ মনিরুল ওই চেককে ব্যবহার করে নুরুল হুদার থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন আমাদের অগোচরে। পরে বিষয়টি যখন নুরুল হুদা আমাদের জানান তখন আমাদের কথাতে নুরুল হুদা মনিরুলকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এতে মনিরুল ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল হুদার বিরুদ্ধে ১৮ লাখ টাকার মিথ্যা চেক জালিয়াতির মামলা দেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা মনিরুলের কাছে টাকা চাই। তবে মনিরুল টাকা না দিয়ে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এবিষয়ে সদর থানায় একটি অভিযোগ করেছি। তবে থানা-পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি।
এদিকে খোজঁ নিয়ে জানা যায় মতিয়ার ছাড়াও মনিরুল প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন ওই এলাকার অনেকে। সরেজমিনে বাউখোলা এলাকায় গেলে স্থানীয়রা বলেন, মনিরুলের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে ওই এলাকার সোহেলউদ্দীন সরদারের ছেলে নোমিছুর রহমানের। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলেন, নোমিছুর রহমানসহ একই এলাকার শাহিদুল ইসলামের ছেলে মোস্তফা বিদেশ যাওয়ার জন্য আখড়াখোলা এলাকার আনছারুজ্জামানের ছেলে জামিলুজ্জামানের কাছে ১১ লাখ টাকা দেন। তবে নোমিছুর-মোস্তফাদের বিদেশ তুলতে ব্যর্থ হন জামিলুজ্জামান। ওই সময় বিদেশ যাওয়ার জন্য জামিলুজ্জামানের কাছে দেওয়া অর্থ ফেরত চাইলে অর্থ ফেরত দিতে টালবাহানা করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে টাকা উদ্ধারে জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুল ইসলামের দারস্থ হলে জামিলুজ্জামানকে টাকার জন্য আটকিয়ে রেখে মনিরুল তার নিজের নামে জামিলুজ্জামানের থেকে ১০ লাখ টাকার চেক (ইসলামী ব্যাংকের চেক নম্বর: ০৪৩৪৮০৮) গ্রহণ করেন। আর ওই চেককে ব্যবহার করে জামিলুজ্জামানের থেকে ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন মনিরুল। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে নোমিছুর-মোস্তফারা মনিরুলের কাছে টাকা চাইলে মনিরুল টাকা না দিয়ে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রারি করতে থাকেন। আর এইসব বিষয় নিয়ে নোমিছুরের সঙ্গে তার পরিবারের বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ছাড়তে হয় নোমিছুরের।
এ ব্যাপারে নোমিছুর রহমান বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদ করে অর্থ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য জামিলুজ্জামানের কাছে টাকা দেয়। তবে জামিলুজ্জামান আমাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হলে জামিলুজ্জামানের কাছে আমাদের পাওনা টাকা আদায়ের কথা বলে তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুল ইসলাম জামিলুজ্জামানের থেকে আমাদের টাকা আদায় করে সেটা আত্মসাত করেন। এদিকে যাদের কাছ থেকে সুদ করে টাকা নিয়েছিলাম তাদের লাভের টাকা দিতে না পারাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মনিরুল ভালো মানুষের মুখোশ পরে তাকে কিন্তু এক নম্বরের দুর্নীতি ওর ভেতরে। শুধু ওর কারণে আমি বাড়ি ছাড়া। ওই টাকাগুলো আমার অনেক কষ্টের টাকা। ইহকালে না হলেও পরকালে মনিরুলকে আমার টাকা দেওয়া লাগবে। আমি কখনো ওরে মাফ করব না।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মনিরুলের ক্ষমতার কাছে আমরা নিরুপায়। সে তো মসজিদ-এতিমখানাকেও ছাড় দেয় না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ পেতে হলে মনিরুলকে লাখে ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া লাগে। যেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তার থেকে নিস্তার পাই না সেখানে সাধারণ মানুষেরা কীভাবে নিস্তার পাবে?
এব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বক্তব্য জানতে চাইলে ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম. কাইয়ুম বলেন, এতদিন কোনো অভিযোগ ঝুলে থাকার কথা নয়। অভিযোগটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি সেটা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএন