সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৩ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

রহিমা বেগমের অপহরণের বিষয় ভুয়া প্রমাণিত: পিবিআই

খুলনার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই এবং ওই নারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাকে অপহরণের প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বরং জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে আত্মগোপনে থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।

জানা গেছে, মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতেন। অবিলম্বে মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানান রহিমা বেগম অপহরণ মামলার আসামি মো. মহিউদ্দীনের মেয়ে মালিহা।

মালিহা আরও বলেন, এসবই নাটক। রহিমা বেগমের পরিবার মামলাবাজ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। কয়েক বছর আগেও ৮ থেকে ৯ বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছিলেন রহিমা বেগম। এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রভাব বিস্তার ও প্রতিবেশীদের দমিয়ে রাখেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রহিমা বান্দরবানে গিয়েছিলেন। সেখানে হোটেলে কাজ নিয়েছিলেন। সেখানকার লোকজনকে বলেছিলেন, তার এক ছেলে ঢাকায় পড়াশোনা করে, টাকার প্রয়োজন। লোকজন তাকে পাশের আরেকটি কাজ ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই কাজটি ঠিক হয়েও গিয়েছিল, তবে তারা তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চান। যা সংগ্রহ করার জন্যই তিনি ফরিদপুরে বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামে যান।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই এবং ওই নারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাকে অপহরণের প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বরং জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে আত্মগোপন করেছিলেন বলে জানায় তদন্তকারী সংস্থাটি।

পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, রহিমার বক্তব্য ও আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন সেসব বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাকে অপহরণের বিষয়টি আমাদের কাছে ভুয়া প্রমাণ হয়েছে। এর পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মুশফিক বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক আবদুল মান্নান বলেন, আমরা কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখছি না। মঙ্গলবার বোয়ালমারীর সদর ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, আশ্রয়দাতা আবদুল কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যসহ অন্তত ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছি।

কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যরা পিবিআইকে জানিয়েছেন, রহিমা তাদের কাছে অপহরণের কথা নয়, বরং বলেছিলেন, তার সঙ্গে তার স্বামী বেলাল হাওলাদার ও সন্তানদের সম্পর্ক ভালো না। সে কারণে তিনি সেখানে যান।

মান্নান বলেন, এর সবই ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং বিষয়টি তার স্বামী ও সন্তারাও জানতেন। তবে ঘটনা যাই হোক, এর নেপথ্যে রয়েছে জমিকেন্দ্রিক বিরোধ।

এ বিষয়ে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সমালোচনা হচ্ছে যে পুরো ঘটনাটা সাজানো, আপনার মা আত্মগোপনে ছিলেন, আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

জবাবে এই নারী বলেন, আমরা কিছুই সাজাইনি। মায়ের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। মায়ের কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। তবে আমি এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমার নিজেরও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি।

মরিয়ম আরও বলেন, মাকে চাপ দিয়ে কিছু জানতে চাইনি। তিনি অনেক অসুস্থ। পিবিআই তদন্ত করছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। তদন্ত যথাযথ হলে আপনারাও অনেক সত্য জানতে পারবেন।

রহিমা বেগমের প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম জানান, রহিমার প্রথম স্বামী আবদুল মান্নান তিন বিয়ে করেছিলেন। এরমধ্যে এক স্ত্রীর ঘরে সন্তান নেই। রহিমার ঘরে তার ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে। অন্য স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে; তারা বরগুনার পাথরঘাটায় থাকেন।

বরগুনায় থাকা মান্নানের দুই ছেলে ওয়ারিশসূত্রে মহেশ্বরপাশার জমির একটি অংশ (দুইকাঠা) বিক্রি করেন স্থানীয় এক মুহুরির কাছে।
তিনি ওই জমি দখল নিতে না পেরে প্রতিবেশী গোলাম কিবরিয়া, মহিউদ্দিন ও হেলাল শরীফের কাছে বিক্রি করেন। তারা জমির দখল নিতে গেলে রহিমার সন্তানদের সঙ্গে বিরোধ বাধে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহেশ্বরপাশার ওই বাড়ির ঘরগুলো ভাড়া দেওয়া। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া আকলিমা বেগম জানান, রহিমা বেগম এ বাড়িতে থাকেন না। তিনি দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে নগরীর বয়রা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে মাঝেমধ্যে একটি ঘরে রহিমা বেগম ও তার দ্বিতীয় স্বামী বেলাল থাকেন।

আকলিমা বলেন, ঘটনার দিন বেলাল স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। রহিমার পানি আনতে গিয়ে না ফেরার কথা বেলালই প্রথম সন্তানদের জানান।

এ মামলায় আটক মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, রহিমা বেগমেরও তিন বিয়ে। মেয়ের ঘটকালি করতে আসেন বেলাল, সর্বশেষ রহিমা তাকে বিয়ে করেন। তবে পরের দুই স্বামীর ঘরে তার সন্তান নেই। তার ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া রহিমার সৎ ছেলের কাছ থেকে জমি কেনেন। সেই জমিতে যাতে যেতে না পারে, সে জন্য রহিমা আত্মগোপন করে অপহরণ মামলা দিয়ে তাকে আটক করিয়েছে। রহিমার মেয়ে মরিয়ম পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে।

এ বিষয়ে মরিয়ম মান্নান বলেন, আমার সৎ ভাইরা তাদের অংশ বিক্রি করে দিয়েছিলেন প্রতিবেশীর কাছে। শরিক হিসেবে বিষয়টি সুরাহার জন্য মা মামলা করেন। ওই মামলার জেরে ওই প্রতিবেশীরা মায়ের ওপর হামলা করে। সেটি নিয়ে মামলা চলছিল।

মরিয়ম বলেন, ওদের কারণে প্রায় এক বছর ধরে নিজের বাড়ি ছেড়ে মা ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাঝে মাঝে নিজের বাড়িতে আসতেন। ঘটনার আগের দিন তিনি এসেছিলেন। পরদিন নিখেঁজ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা ওই প্রতিবেশীদের সন্দেহ করেছি।

গত ২৭ আগস্ট খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। সম্ভাব্য সবস্থানে খুঁজেও তার সন্ধান না পেয়ে বাড়ির লোকজন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার অপহরণের মামলা করেন। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পুলিশের ওই ইউনিট। এ ঘটনায় রহিমার স্বামী হেলাল হাওলাদারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর মধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামের ঝোঁপ থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহকে নিজের মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নান। পরদিন ফুলপুরে গিয়ে মরদেহটি মায়ের বলে শনাক্ত করেন। তবে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি এখন মরিয়ম মান্নানের সঙ্গে ঢাকার বসুন্ধরার বাসায় আছেন।

৫৫ বছর বয়সী এ নারীর সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক মাস ধরে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তার সন্তানরা।

এসএন

Header Ad
Header Ad

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী দোলনা আক্তার গ্রেপ্তার

দোলনা আক্তার । ছবি: সংগৃহীত

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দোলনা আক্তারকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের কবিরমামুদ গ্রামের দুলাল হোসেনের কন্যা।

পুলিশ জানিয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দোলনা আক্তার আত্মগোপনে চলে যান এবং দীর্ঘদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে চালু হওয়া ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের মধ্যে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, গত ৪ আগস্ট ফুলবাড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দোলনা আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) তাকে আদালতের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলহাজতে পাঠানো হবে।

Header Ad
Header Ad

গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

ওমানের মাস্কটে ৮ম ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের অবকাশে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওমানের মাস্কটে আয়োজিত অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের অবকাশে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুই নেতার মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক।

বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উভয়পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বিশেষভাবে গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন সংক্রান্ত আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) স্থায়ী কমিটির বৈঠক আয়োজনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন এবং ভারতকে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান।

বৈঠকে দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা নিয়েও আলোচনা হয়। উভয়পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, এই আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ প্রশস্ত হবে।

এদিকে, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হতে যাওয়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর এই প্রথমবার দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিজিবির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশ নেবে।

বৈঠক শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে জয়শঙ্কর জানান, আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিমসটেকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

Header Ad
Header Ad

মিঠাপুকুরে এক যুগেও চালু হয়নি ইকোপার্ক, শত কোটি টাকার প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

রংপুরের মিঠাপুকুরে ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। এটি ছিল উপজেলার একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্প। তবে বাস্তবে এটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবী, বখাটে ও অসামাজিক কার্যকলাপকারীদের অভয়ারণ্যে।

২০১৩ সালে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান। তখন প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১০০ কোটি টাকা। তবে দীর্ঘ এক যুগেও প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। বরং, বরাদ্দ বাড়লেও উন্নয়ন কার্যক্রম তেমন অগ্রগতি লাভ করেনি।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২২৬ একর জায়গায় মিঠাপুকুর ইকোপার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। এতে বিশ্রামাগার, রান্নাঘর, পার্কিং এলাকা, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, গোলঘর, টিকিট কাউন্টার, প্রবেশদ্বার, নিরাপত্তাকক্ষ, গণশৌচাগার, পানির ট্যাংক, পানির সরবরাহ লাইন, পুরাতন বন বিশ্রামাগার উন্নয়ন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ব্যারাক, পার্ক অফিস ভবন, ডিসপ্লে মানচিত্র, আমব্রেলা শেড, স্পিনার, পাকা বেঞ্চ নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তবে, শুধুমাত্র সীমানা প্রাচীর ও কিছু দায়সারা কাজ ছাড়া প্রকল্পটির তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। এমনকি ইকোপার্কের প্রধান ফটক আজও সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।

স্থানীয়দের মতে, এই প্রকল্পের শত কোটি টাকার বরাদ্দ কোথায় গেল, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মিঠাপুকুর ইকোপার্কটি রংপুরের শঠিবাড়ী-দিনাজপুরের আফতাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। একই মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ব্যক্তিগত বিনোদনকেন্দ্র 'স্বপ্নপুরী' রয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, স্বপ্নপুরীর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে মিঠাপুকুর ইকোপার্কের উন্নয়ন ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

সরেজমিনে ইকোপার্ক পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে গরু, ছাগল ও ঘোড়া চরছে। প্রবেশদ্বারে কোনো পাহারাদার নেই, চারপাশে সীমানা প্রাচীর থাকলেও একাধিক জায়গায় ভাঙা। এসব পথ দিয়ে বহিরাগত ও মাদকসেবীরা অবাধে প্রবেশ করে সেখানে মাদকের আসর বসায়। দর্শনার্থীরা আসলেও নিরাপত্তার অভাবে দ্রুত ফিরে যান। বিভিন্ন অবকাঠামোর যন্ত্রপাতি অযত্নে নষ্ট হতে বসেছে।

স্থানীয় ১৩ নম্বর গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ তালুকদার বলেন, "ইকোপার্কের প্রকল্পে কত কোটি টাকার কাজ হয়েছে, তার সঠিক তথ্য মন্ত্রণালয়ের নথিতেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদেও কোনো নথি জমা হয়নি। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিজেল এন্টারপ্রাইজ নিজের ইচ্ছামতো কাজ করেছে।"

এ বিষয়ে বিএনপির মিঠাপুকুর উপজেলা সদস্য সচিব মোঃ মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন পাইকাড় বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের প্রতি কোনো জবাবদিহিতা রাখেনি। তাদের নেতাকর্মীরা যেখানে যা পেরেছে লুটপাট করেছে। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখনও জানতে পেরেছি যে এখানে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলছে। কিন্তু বাস্তবে কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে।"

তিনি আরও বলেন, "এইচ এন আশিকুর রহমান সংসদে বাজেট বরাদ্দ এনে তার ছেলে রাশেক রহমানের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিজেল এন্টারপ্রাইজকে কাজ দিয়েছেন। তবে কাজের মান কিংবা প্রকৃত বাস্তবায়ন হয়নি।"

মিঠাপুকুর ইকোপার্ক প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা ও অর্থ লোপাটের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে অনেকেই মনে করেন। বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার না হলে, এটি শুধুই একটি ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে থেকে যাবে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, প্রকল্পটি পুনরায় কার্যকর করা হোক এবং এলাকাবাসীকে কাঙ্ক্ষিত বিনোদনকেন্দ্র উপহার দেওয়া হোক।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী দোলনা আক্তার গ্রেপ্তার
গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক পররাষ্ট্র উপদেষ্টার
মিঠাপুকুরে এক যুগেও চালু হয়নি ইকোপার্ক, শত কোটি টাকার প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ
মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম হলেন শেখ আব্দুল রহমান আল হুদাইফি
মালিতে পরিত্যক্ত সোনার খনি ধসে পড়ে অন্তত ৪৮ জন নিহত
কেমন হলো টাইগারদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জার্সি
‘হজযাত্রী প্রতি অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা বেশি নিয়ে আমরা ভাগ করে নেব’
হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি: অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণার পর খুলল ৬ জলকপাট
বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির অভিযোগে দুটি স্টল বন্ধ
ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে পরিচয় করানোর নামে লাইভে এসে কাপড় বেচলেন পরীমণি
উত্তরপূর্ব ভারতের ৫৫ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পক্ষে
দেশকে কারা নেতৃত্ব দেবে তা বাছাই করার সময় এসেছে: তারেক রহমান
বিদ্রোহ থেকে সরে এলেও অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাবিনারা
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের সচিবালয়মুখী পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, জলকামান নিক্ষেপ
নির্বাচনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা, গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা ব্যারিস্টার মামুনের
গান গাইতে গাইতেই মারা যেতে চান আশা ভোঁসলে
ইলন মাস্কের ইন্টারনেট বাংলাদেশে: সুবিধা কি, খরচ কত?  
ভারতের তামিলনাড়ুর শতবর্ষী ম্যাগাজিনে মোদির ব্যঙ্গচিত্র, ওয়েবসাইট ব্লক নিয়ে বিতর্ক
সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের অভিযানে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার
শেখ হাসিনার পতন হলেও দেশে এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি: রিজভী