হাসপাতালের সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্র জমায় বাধা!
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকোজিটের (এমএসআর) ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র জমাদানে ঠিকাদারদের বাধা দেবার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন ও বহু বিতর্কিত যুবলীগ নেতা শাহজাহান কবীর শিপলুর নেতৃত্বে অন্য ঠিকাদারদের সিডিউল ছিনতাই করে নিজেদের দরপত্র দাখিল করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে দেখা যায় শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের।
৬ গ্রুপের ১৮২টি সিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে মাত্র ১৩টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে দরপত্র জমা দানে বাধা দেওয়া হলেও তারা ছিলেন নিরব দর্শক। এতে ঠিকাদারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করে। বিষয়টি ঠিকাদাররা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতার ছেলে ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলুর পক্ষ নিয়ে যুবলীগ নেতাদের দরপত্র জমাদানে অংশ নেওয়া এবং অন্য ঠিকাদারদের বাধা দেওয়ায় শহরজুড়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
মাগুরার মামুন ড্রাগস ও অপরাজিতা ড্রাগসের পরিচালক আজিজুল হকের অভিযোগ, হাসপাতালের দরপত্র নিয়ম অনুযায়ী আমার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জমা দিতে যান। এ সময় পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা আমার ১৩টি সিডিউলের পেপার ছিনতাই করে নেয়। দরপত্রগুলোর পে-অর্ডার ফেরত দিলেও শিডিউল ছিনতাই করেছে তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি হতভম্ব হয়েছি।
এদিকে জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়কের কাছে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ দিলেও তিনি দুপুর ১টার পরে অভিযোগ গ্রহণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে দরপত্র স্থগিত ও পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি জানান ভুক্তভোগী।
আজিজুল হক বলেন, শুধু আমি নয়, যশোর জেলার বাইরে থেকে যারা দরপত্র জমা দিতে এসেছিল তাদের অপমান-অপদস্থ, ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোর করে বের করে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে হাসপাতালের দরপত্র দাখিলের কার্যক্রম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকোজিটের (এমএসআর) সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্রের সিডিউল বিক্রি হয় ৬টি গ্রুপের মোট ১৮২টি। কিন্তু সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে বাধার কারণে দরপত্র দাখিল হয়েছে মাত্র ১৩টি। এর মধ্যে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দাখিল হয় ৬টি এবং আড়ইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে দাখিল হয় ৭টি দরপত্র। টেন্ডারগুলো খোলার পরে ক গ্রুপে ৩টি,খ গ্রুপে ২টি, গ গ্রুপে ২টি, ঘ গ্রুপে ২টি, ঙ গ্রুপে ২টি, চ গ্রুপে ২টি দরপত্র জমা পড়ে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, যশোর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি রফিকুর রহমান তোতনের ছেলে শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু ঢাকার মিডফোর্ড এলাকার বনানী মেডিকেল ও গোপিবাগ এলাকার আলেয়া কর্পোরেশন নামে দুটি লাইসেন্সে এই কাজে বাধা দেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। অন্যদের ফেলতে দেননি। সন্ত্রাসী টাক মিলন, শিপলুসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকদের দিয়ে তিনি এই দরপত্র বাগিয়ে নেবার চেষ্টা করেন। কেননা গত এক যুগ ধরে ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু হাসপাতালের সব পণ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে আসছেন। এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জটিল শর্ত জুড়ে দেবার কারণে তিনি ঢাকার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আক্তারুজ্জামান জানান, সোমবার ছিল হাসপাতালের পণ্য সামগ্রী সরবরাহের সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। সন্ত্রাসীরা বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ আসে।
তিনি বলেন, ভিডিও চিত্রেও দেখা গেছে। আমরা পুলিশকে আগেই অবহিত করেছিলাম কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে যদি দরপত্র দাখিলে বাধার ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের কি করার আছে। বিষয়টি দরপত্র যাচাই-বাছাই কমিটি দেখছে।
এদিকে অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন মিলন বলেন, ‘আমি হাসপাতালে দরপত্র দাখিল করতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো বাধা দেবার ঘটনা ঘটেনি।’ তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র জমা দিয়েছেন কি? তা জানতে চাইলে বলতে পারেননি তিনি।
ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তো সিডিউল সংগ্রহ করিনি। জমা দিব কিভাবে। ঢাকার প্রতিষ্ঠানের নামে জমা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন এবং ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে দরপত্র দাখিলের সময় আমাদের টিম উপস্থিত ছিল। বাধার দেবার ঘটনায় কেউ আমাদের অভিযোগ করেনি।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) বেলাল হুসাইন বলেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ছিল। সেখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিচতলায় গোলযোগের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ