মিষ্টি পান চাষে জহুরুলের বাজিমাত, অল্পদিনেই সংসারে ফিরেছে দারুণ স্বচ্ছলতা
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
অভাব-অনটনের সংসার তার। অন্যের দোকানে টেইলারিং (দর্জির) কাজ করতো। দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও কখনো সফলতার আলো দেখতে পাননি। ভাগ্যের চাকায় অভাবের শনি লেগেই তো। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চালিয়ে আসলেও সন্তানদের লেখাপড়া খরচ বহন করতে পারতো না। কি করবেন এটা ভেবে মানুষিকভাবে এনিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন থাকতেন।
এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় ভুগতে থাকে। একপর্যায়ে এক বন্ধুর পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাড়ির আঙিনায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন রাজশাহীর মিষ্টি পান। এরপর মিষ্টি পান চাষেই তার ভাগ্যের চাকায় স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। পরে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এদিকে, পান চাষের তার এমন সফলতা দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।
বলছিলাম টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ৩৮ বছর বছর বয়সী হতদরিদ্র কৃষক মো. জহুরুল ইসলামের সফলতার গল্প। জহুরুল ইসলাম উপজেলার মামুদ নগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত সরব আলীর ছেলে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার তার।
জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সাল থেকে আমি পান চাষ করছি। উপজেলায় আমিই প্রথম রাজশাহীর মিষ্টি পানের চাষ শুরু করি। পানের বরজ তৈরি করতে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। কোনো সমস্যা হলে রাজশাহীর চাষিদের পরামর্শ নিই। পান চাষে এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভের পরিমাণ বাড়বে।
তিনি বলেন, আমি এই বাগানের পান স্থানীয় হাট-বাজারসহ জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও পাইকারি বিক্রি করি। মাঝে মাঝে বিক্রির জন্য রাজশাহীতেও পাঠাই। এ বছর ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে বরজের প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু পান গাছ মারা গেছে। পোকার উপদ্রব ঠেকাতে ওষুধ ছিটানো ছাড়া অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই বলে পান চাষ লাভজনক।
স্থানীয় কৃষক হামিদ খান ও কাদের আলীসহ অনেকে বলেন, মিষ্টি পান চাষের আগে জহুরুল অতিকষ্টে জীবনযাপন করতো। পরে অনেক কষ্ট করে রাজশাহীর মিষ্টি পানের একটি বরজ তৈরি করেছে। আমরা তার এখান থেকে পান কিনে খাই। পানের স্বাদ রাজশাহীর পানের মতোই। তার এমন দারুণ সফলতা দেখে আমরা নিজেরাও মিষ্টি পান চাষের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ইমরান হোসাইন জানান, পান চাষে সফল জহিরুল ইসলাম। তিনি তার ২৫ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিকভাবে পানের বাগানের খোঁজ-খবর রাখছি এবং পরামর্শ দিয়ে আসছি। এছাড়া পান চাষের জন্য উপযোগী নাগরপুর। উপজেলার পান চাষে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগ্রহীদের সবধরণের সহযোগীতা করা হবে।