৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার নির্মাণাধীন ব্রিজ ভেঙে পড়ল নদীতে!
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজ ঢালাই দেওয়ার সময় নদীতে ভেঙে পড়ে গেছে। পরে ঢালাইয়ের সময় ভেঙে পড়ার ঘটনাটি চাপা দিতে ওইরাতে ব্রিজ নির্মাণের বিভিন্ন মালামালসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ সরিয়ে ফেলে ইসমাইল কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপরই নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় সওজ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূঞাপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন পৌর এলাকার বীরহাটি এলাকায় ভূঞাপুর লৌহজং নদীর অংশে খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। ব্রিজটি দুইভাগ করে সাটারিং তৈরি করা হয়েছে। একপাশের অংশে ঢালাই দেওয়ার পরই ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। ঢালাইয়ের সময় ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার আগেই ঢালাইয়ের ভাঙা অংশগুলো নদী থেকে তোলা হয় রাতব্যাপী।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাইপাস সড়কের কাজ শুরু করেছে। এই সড়কের ভূঞাপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন বীরহাটি এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এটির নির্মাণকাজ করছে ইসমাইল কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ জুলাই ব্রিজের একপাশে সওজের প্রকৌশলে ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। এ সময় হঠাৎ সাটারিংসহ ঢালাই অংশ নদীতে পড়ে যায়।
এরপর তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতে পড়া ভেঙে পড়া ঢালাইসহ মালামাল সরিয়ে ফেলে। পরে সকালে বিষয়টি স্থানীয়রা টের পান। এনিয়ে স্থানীয়রা ব্রিজ নির্মাণ কাজে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের কিছু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ করে। এছাড়া ভূঞাপুর লিংক সড়ক নির্মাণ কাজের ধীরগতি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জেলা সওজ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ভূঞাপুর-তারাকান্দি জেলা মহাসড়কের বাহাদীপুর লেভেল ক্রসিং থেকে এলেঙ্গা-ভূঞাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বিরহাটি লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত ১.৮০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৭৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৬৯ মিটার দীর্ঘ একটি পিসি গার্ডার সেতু এবং ১২ মিটার দীর্ঘ একটি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ১ দশমিক ৬১ লাখ ঘনমিটার মাটি ভরাটের কাজ করা হবে। প্রকল্পটি টেকসই করার লক্ষে ১৫০ মিটার কংক্রিট স্লোপ প্রটেকশন উইথ জিও টেক্সটাইল, ১৩০ মিটার আরসিসি ওয়াল এবং ১২৫ মিটার আরসিসি প্যালাসাইডিংয়ের কাজ করা হবে। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পে ২০টি ট্রাফিক সাইন, ৩০টি সাইন পোস্ট, ৪০০টি কংক্রিট গাইড পোস্ট এবং ২টি কংক্রিট কিলোমিটার পোস্ট নির্মাণ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সড়ক ও ব্রিজের কাজ মূল ঠিকাদার করছে না। প্রভাবশালীরা কাজ কিনে এনে তাদের মতো করে কাজ করছে। ঢালাই ভেঙে যাওয়ার দিন সওজের প্রকৌশলী উপস্থিত ছিল। তার উপস্থিতিতে ব্রিজের ঢালাই কাজ হওয়ার সময়ই ভেঙে পড়েছে। তাৎক্ষণিক রাতের মধ্যেই সেগুলো সরিয়ে ফেলেছে। এ ছাড়া ওই ব্রিজসহ সড়কের কাজ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে।
সড়ক ও ব্রিজের কাজে দায়িত্বরত নাইট গার্ড কাজিম উদ্দিন বলেন, ব্রিজটির কাজ যেদিন থেকে শুরু হয় তখন শুকনো ছিল। পানি আসার আগেই কর্তৃপক্ষ তরিঘরি করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য নামমাত্র লোহার বদলে বাঁশের সাটারিং করে। পরে পানি আসে নদীতে। এতে নদীতে পানির স্রোত ছিল। ফলে ঢালাই করার পরই সেই বাঁশের সাটারিংসহ ঢালাই নদীতে পড়ে যায়। এরপর কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় সওজের প্রকৌশলী।
ব্রিজ নির্মাণকাজের ঠিকাদার আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, বন্যার আগে পানির উপর সাটারিং করা হয়। পরে ব্রিজটির ঢালাই কাজের জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সওজ কর্তৃপক্ষ কাজ করতে দেয়নি। ফলে সাটারিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমেরি বলেন, পানি আসার আগেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য সাটারিং করেছিল ঠিকাদার। বর্তমান প্রেক্ষিতে ওই সাটারিংয়ে ঢালাইয়ে ঝুঁকি থাকায় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে স্টিল, লোহার তৈরি সাটারিং তৈরি করতে বলা হয়েছে। ওই সড়ক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়নি। আগামী ২০২৫ সালে জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রয়েছে।