চিকিৎসার অভাবে ১৩ দিনপর মারা গেল গুলিবিদ্ধ টাঙ্গাইলের কলেজছাত্র ইমন
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিনপর মৃত্যুবরণ করেছে টাঙ্গাইলের ইমন হাসান নামে ডিগ্রিতে পড়ুয়া এক কলেজছাত্র।
রবিবার (১৮ আগস্ট) ভোর ৫ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যায়। ইমনের বাড়ী টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার জগৎপুরা গ্রামে।
যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর পাশের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন গ্রামের তার নানা কিতাব আলী শেখের বাড়ীতে আশ্রয় নেয় ইমনদের পরিবার। পরে সেখানে ১০ বছর থাকার পর তার বাবা জুলহাস উদ্দিন মারা যায়।
সরেজমিনে ইমনের নানা ও দাদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে প্রতিবেশিরা ভিড় করছে ও তার স্বজনরা আহাজারি করছে। এসময় কথা হয় ইমনের বৃদ্ধ দাদী ময়মনা বেগমের সাথে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনে মির্জাপুরের গোড়াই নামকস্থানে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিল আমার নাতী। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে ইমন আহত হয়। শুধু তাই নয়- পুলিশরা গুলি করেও শান্ত হয়নি, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারি লাঠি দিয়ে আঘাত করে।
এসময় তার বন্ধুরা আহত ইমনকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সেখান থেকে সরে গেলে গুরুত্বর অবস্থায় তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত ৬ তারিখে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে ঢাকা মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ১৩ দিন আজ রবিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এলাকাবাসীরা জানায়, ইমনের বাবা ছিলেন ভ্যান চালক। ইমনরা তিন ভাই ও এক বোন। তারমধ্যে ইমন ছিল বড়। বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ইমনকেই পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। এরআগে দরিদ্র ইমনের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা রিনা বেগম অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো।
ইমনের প্রতিবেশি বন্ধু রনি, রঞ্জু, সাইফুল, শাকিব, অন্তর, হৃদয়, ইমরান, রুবেল, নয়ন ও আশিক বলেন- ইমন টাঙ্গাইল শহরের তার চাচা নবাবেব বাসায় থেকে টিউশনি করতো। গত ৪ আগস্ট কোটা বিরোধী আন্দোলনে মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় মিছিলে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুরুত্বর আহত হয়। ইমন অনেক ভাল মনের মানুষ ছিল এবং পুরো পরিবার তার উপর নির্ভরশীল। সে মারা যাওয়ায় সংসারের হাল ধরার আর কেউ রইল না। ইমনকে হারিয়ে পরিবারটি এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল।
নিহত ইমনের প্রথম জানাজা ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দ্বিতীয় জানাজা নিজ গ্রামের নলিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তার দাদার বাড়ির পাশের একটি কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে। ইমনের মৃত্যুর খবরে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা তার স্বজনদের সমবেদনা জানান।
ইমন হাসান নলিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ভূঞাপুরের অলোয়া মনিরুজ্জামান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করে গোপালপুরের হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। পরে নিজের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের হাল ধরতে টাঙ্গাইলের এক চাচার বাসায় থেকে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে টিউশনি করতো।