কিশোরী ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা মীমাংসা করতে এসআই-মেম্বারের চাপ!
ঢাকার ধামরাইয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে হৃদয় হোসেন (১৯) নামের এক তরুণের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা ধামাচাপা ও মীমাংসা করতে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবাকে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিউটন মৃধা এবং উপজেলার আমতা ইউনিয়নের মেম্বার মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
রবিবার (২১ মে) ঢাকাপ্রকাশ-কে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা। এর আগে গত
১৬ মে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় ধর্ষণ চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্ত হৃদয় হোসেন ধামরাই উপজেলার নজরুল ইসলামের ছেলে। সে বখাটে এবং উচ্ছৃঙ্খল বলে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
অভিযোগ এবং ভুক্তভোগী কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ মে বিকালে ভুক্তভোগী কিশোরী ছাড়া তার পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিল না। আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের বাড়ি সংলগ্ন দক্ষিণপাশে গোসলখানায় সে গোসল করতেছিল। ওই সময় অভিযুক্ত হৃদয় হোসেন গোসলখানায় অনধিকার প্রবেশ করে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ধর্ষণের উদ্দেশে জোরপূর্বক তার পরিহিত জামা-কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলে এবং তার শ্লীলতাহানি করে। ওই সময় মেয়েটির ডাক-চিৎকারে আশপাশে থাকা লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখলে অভিযুক্ত হৃদয় হোসেন ভুক্তভোগী কিশোরীকে প্রাণে মারার হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি থানায় অভিযোগ দিছি। গতকাল (১৯ মে) এসআই নিউটন আমার এখানে এসেছিল। সে আমাকে বলছে, এই বিষয়ে মীমাংসা করার জন্য। সেই সাথে মেম্বার আনোয়ার হোসেনও আমাকে মীমাংসার জন্য চাপ দেয়। মেম্বার বলছে, তোমরা যদি মীমাংসা না করো তাহলে তোমরা যা পারো করো আর আমরা আমাদের ব্যবস্থা করব।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, আমি গরিব মানুষ, ভ্যান চালাইয়া খাই। মীমাংসা হইলে হয়তো কিছু টাকা দিবে। যেখানে আমার মেয়ের ইজ্জত চলে গেছে সেখানে টাকা দিয়ে আমি কি করব। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। আমি অন্য কিছু চাই না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধামরাই থানাধীন কাওয়ালী পাড়া ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিউটন মৃধা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে। তাই ঘটনার সত্যতা পাইছি বা পাইনি সেটা এখন বলা যাবে না।
আপনি ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবাকে ঘটনাটি মীমাংসার করার জন্য বলেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো কথা আমি বলিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি যা জেনেছি তা ক্যাম্প ইনচার্জকে বলেছি। আপনার আরও কিছু জানার থাকলে ক্যাম্প ইনচার্জের কাছ থেকে জেনে নিন।
তবে এই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন কাওয়ালী পাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন।
অভিযোগের বিষয়ে আমতা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি মেয়ের মুখে শুনেছি। আমাকে ওভারটেক করে তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তারপর দাড়োগা এসে আমাকে বলেছে, ঘটনাটি মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য।
ধর্ষন চেষ্টার মতো ঘটনা তো মীমাংসাযোগ্য অপরাধ না। আপনি এটাকে কীভাবে মীমাংসা করতে চাইলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মীমাংসার কথা বলেছি। দাড়োগা মীমাংসা করার কথা বলছে। তারপরও যদি তারা মীমাংসা না করে কোর্টে গিয়ে মামলা করুক।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন-অর-রশীদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার অফিসার এমন কথা বলে নাই। হয়তো এলাকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এমন কথা উঠছে। আপনি ভুক্তভোগীদের থানায় পাঠিয়ে দিয়েন আমি ব্যাপারটা দেখব।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আব্দুল্লাহিল কাফি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এসআইয়ের তো এমন কথা বলার কথা না। আপনি ভুক্তভোগীকে থানায় পাঠিয়ে দিয়েন। আমি ওসি সাহেবকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে দেব।
এসআইএইচ