ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষকরা

কিশোরগঞ্জের হাওরে বছরের একটি ফসল নিয়েই এখানকার কৃষকরা স্বপ্ন বুনে। ইটনা-মিঠামঈন-অস্টগ্রাম-নিকলি-বাজিতপুর হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। বৈশাখ মাসের ১৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষকের ধান ঘরে তুলা শেষের দিকে। অনেকেই আবার ধান কাটা শুরু করেছে। আবার অনেক ক্ষেতের ধান এখনো কাঁচা রয়েছে। এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা জমির ধান কেটে এবং রোদে শুকিয়ে ধান ঘরে উঠাতে পারছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ধান ও খড় একসাথে শুকাচ্ছে কৃষকরা। ধান কাটা, মাড়াই আর পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।
এই বছর কৃষকদের সাথে সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, ধান পাকার আগ মুহূর্তে ব্রি-২৮ জাতের ধান চিটা হয়ে গেছে। এ ছাড়াও এই বছর জ্বালানিসহ কৃষি উপকরণের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কৃষকরা বলছে, বাজারে ধানের ভালো দাম না পেলে ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক-শ্রমিক। কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে ৩২ হাজার ২২৫ জন শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ৫০৯টি, রিপার মেশিন ৪৫টি। এদিকে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় ৬০% ও উজানে ৭০% বোরো ধান কাটা হয়েছে । ধান কাটা, মাড়াই আর পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছে সবাই।
ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি হাওরে কথা হয় করিমগঞ্জের জয়কা ইউনিয়নের লাল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এই বছর ব্রি-২৮ ধান ৭ একর জমিতে চাষ করে ৯০-৯৫ মণ ধান পেয়েছি। নেক ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে সব ধান চিটা হয়ে গেছে। এ বছর হাইব্রিড হীরার ফলন ভালো হয়েছে। ধানের দাম ভালো পেলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা পোষাবে।
করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুরের রৌহা গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম বলেন,ব্রি-২৮ ধান চিটা হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ব্রি-২৯ জাতের ধান ৮০ ভাগ আশা করা যায়। কারণ এই জাতের ধান ভালো ফলন হয়েছে।
বর্শিকুড়া ইউনিয়নের কৃষক সুজন বলেন, আগাম ফসলের আশায় এইবার ব্রি-২৮ জাতের ধান পুরোপুরি শেষ। এই জাতের ধানে খরচ বেশি। সামনের বছর থেকে ব্রি-২৮ ধান আর চাষ করব না। কৃষি অফিস থেকে খোঁজ নিলে হয়তো ধানের এত ক্ষতি হতো না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই বছর কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৯০ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি-২৮ ধান, যেগুলোতে নেক ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে সেগুলো ৩০ শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়েছে।
ইটনা উপজেলার এলংজুরি, বড়িবাড়ি, সাহেলা, ইটনার বড় হাওরসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য কৃষকের চাষ করা ব্রি-২৮ জাতের ধানের শিষ বের হওয়ার পর শিষগুলো পচে শুকিয়ে চিটে হয়ে গেছে। এসব জমি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা যদি তাদের সময়মতো ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন তাহলে হয়তো তারা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতেন না।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার জানান, ব্রি-২৮ জাতের প্রায় ৭৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রি-২৮ ছাড়া এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
