ধামরাইয়ে ভিজিএফের চাল নিয়ে নয়-ছয়
ঢাকার ধামরাইয়ে সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বরাদ্দকৃত ভিজিএফের এই চাল দুস্থদের মাঝে বিতরণের নির্দেশ থাকলেও বেশিরভাগ ইউপি সদস্যের মতামত না নিয়ে তা বিতরণ করা হয়েছে মাদ্রাসায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুয়াপুর ইউনিয়নে দুস্থদের জন্য ভিজিএফের ৪০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। যা ৪০টি দুস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। উপজেলার খাদ্য গুদাম থেকে এই চাল উত্তোলন করেন ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী মাহাবুব আলম। তবে বেশিরভাগ ইউপি সদস্য এই চালের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চালের বিতরণের হিসেবেও গরমিল পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান বলছেন, বরাদ্দকৃত ৪০০ কেজি চালের ৩৫০ কেজি চাল ৩টি মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ কেজি ইউনিয়ন পরিষদের ঝাড়ুদারকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী জানান, ৩০০ কেজি চাল ৩টি মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০০ কেজি চাল গরীব-দুঃখীদের মাঝে চেয়ারম্যান সাহেব বিতরণ করেছেন। অন্যদিকে যেসব মাদ্রাসায় চাল দেওয়া হয়েছে সেসব মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনটি মাদ্রাসায় মোট ৩২০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা যায়, ভিজিএফ বরাদ্দের ৪০০ কেজি চালের মধ্যে ৩টি মাদ্রাসায় ৩২০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে মাওলানা গোলাম মর্তুজা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ১০০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। যা নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ইসমাইল হোসেন মর্তুজা। কুটিরচর কবরস্থান হাফিজিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মোঃ আমান উল্লাহর সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানে ১০০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। হাফেজী হুজুর রহমত উল্লাহ আলাইহি মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে ১২০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।
তবে সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী মাহবুব আলম জানান, ৩টি মাদ্রাসায় ১০০ কেজি করে মোট ৩০০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০০ কেজি চাল গরীব-দুঃখীদের মাঝে চেয়ারম্যান সাহেব বিতরণ করেছেন।
অন্যদিকে একাধিক ইউপি সদস্য জানান, তারা এই চালের সম্পর্কে কিছুই জানেন না। দুই-একজন ইউপি সদস্য বরাদ্দকৃত চালের সম্পর্কে জানলেও বিতরণে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মান্নান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার জানামতে ৩ মাদ্রাসায় চালগুলো দেওয়া হয়েছে। তবে কোন মাদ্রাসায় কত কেজি চাল দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। শুধু জানি আমার ওয়ার্ডের এক মাদ্রাসায় দুই বস্তা চাল (১০০ কেজি) দেওয়া হয়েছে।
গরিবের চাল এতিম খানায় কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ৩ জনের নাম দিতে বলেছেন। আমি তিনজনের নাম দিতে গিয়ে জানতে পারি চালগুলো ৩ মাদ্রাসায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি আমি কিছু জানি না।
এ প্রসঙ্গে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মোতালেব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদের আগে ইউনিয়ন পরিষদে কোনো ধরনের চাল আসছে কিনা এমন কোন তথ্য আমার কাছে নাই। ঈদের পরেও আমি এখন কোনো তথ্য পাইনি। তা ছাড়া দুইজন নারী মেম্বারসহ অনেক মেম্বারই এই চালের কথা জানেন না।
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদে ৪০০ কেজি চাল আসার বিষয়টি ঈদের আগে না জানলেও ঈদের পরে অন্য মাধ্যমে জেনেছেন বলে জানান ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শফিক ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. সামসুল হক। তবে এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি বলেও জানান তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কফিল উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে ৪০০ কেজি চাল আসছিল। তারপর যেটা ৪০ জনকে দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে হাজার-হাজার মানুষ এসে হাজির হয়েছিল। পরে মেম্বারদের সাথে কথা বলে চালগুলো মাদ্রাসায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরে দুইটি মাদ্রাসায় ১০০ কেজি করে ২০০ কেজি এবং একটি মাদ্রাসায় দেড়শ কেজি চাল দেওয়া হয়। বাকি ৫০ কেজি চাল ইউনিয়ন পরিষদের ঝাড়ুদারকে দেওয়া হয়েছে।
দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল মাদ্রাসায় আপনি দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে হাজার-হাজার মানুষ এসেছিল। যদি ৪০ জনকে দিতাম তাহলে বাকিরা আমার পরিষদে হামলা করত।
একাধিক ইউপি সদস্য অভিযোগ করেছেন আপনি তাদের মতামত নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চার-পাঁচজন মেম্বার আছে তারা বিএনপিপন্থী। তারা চালটি আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল। পারেনি বলে তারা এমনটা বলছেন।
এসআইএইচ