কান্নায় ভাসছে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের ৪ পরিবার

‘মা বলেছিল ঈদের নতুন কাপড় আনতে যাচ্ছি। আমি বলছিলাম-মা তোমরা কে কে যাচ্ছ। মা বলল-আমি একা যাচ্ছি না বাবা, আমার সঙ্গে আরও ৪ জন যাচ্ছে। পরে মাকে বললাম, মা সাবধানে যাবা। আধা ঘণ্টা পর খাবার নিয়ে যখন বসছি তখনি জানতে পারি ট্রেন দুর্ঘটনার খবর। সেই দুর্ঘনায় আমার মাসহ সঙ্গে থাকা ৪ জন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। তখন যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ল। মাকে হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ৪ জনের মধ্যে মৃত অনাথ দাসের স্ত্রী নিহত আরতী রানী দাসের (৫৫) ছেলে মঙ্গল চন্দ্র দাস। পেশায় তিনি একজন গ্রাম পুলিশ। তিনি বলেন, ২ ভাইসহ আমাদের ৮ সদস্যের একটি পরিবার। বহু বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে সংসার চালাতে সহযোগিতা করত। ঈদে নতুন কাপড় জাকাত আনতে গিয়ে মা এভাবে ট্রেনে কাটা পড়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারেনি।
এ ঘটনায় নিহত শান্তি রানীর ছেলে গোবিন্দ জানান, সকালে খবর আসে ট্রেন কাটা পড়ে ৪ জন মারা গেছে। এ খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি নিহতদের মরদেহ রেললাইনের নিচে ছড়িয়ে ছিটে পড়ে আছে। আশপাশের কোনো লোকজন ছিল না তখন। পরে জানাজানি হলে স্থানীয়রা এসে ভিড় করেন। পুলিশও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে সেই সময়। মা ও বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। হাউ-মাউ করে কান্না করছে তার স্বজনরাও।
জানা যায়, বুধবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সল্লা ইউনিয়নের কামাঙ্খামোড় এলাকায় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়েন চারজন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা। এ ঘটনায় আহত হয় একজন।
নিহতরা হলেন, জেলার ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল দাস পাড়া এলাকার মৃত গোপালের স্ত্রী বাসন্তী (৬০), মৃত অনাথ দাসের স্ত্রী আরতী রানী দাস (৫৫), হরি বন্ধুর স্ত্রী শান্তি রানী (৪৫) ও তাদের মেয়ে শিল্পী রানী (২৫)। শান্তি রানী ও শিল্পী রানী সম্পর্কে মা-মেয়ে। আহত জ্যোস্না রানী গোপাল চন্দের স্ত্রী। তিনি ভূঞাপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান জানান, ভোরে নিহত ৪ জন নারী রেললাইনের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ওই ৪ নারী নিহত হন। আহত হন আরও এক নারী। মরদেহ স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে ৪ জন নিহতের খবর পেয়ে নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি যতদিন চেয়ারম্যান আছি ততদিন পরিষদের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও তাদের সৎকারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। নিহত পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং নিহতদের সৎকারের যাবতীয় খরচ প্রশাসন থেকে দেওয়া হবে।
এসআইএইচ
