প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, থাকবে ৪ স্তরের নিরাপত্তা
১৯৬তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবারের ঈদে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত পড়তে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৪ স্তরে কাজ করবে।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাতের নিরাপত্তার বিষয়বস্তু ও সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও পৌর মেয়র পারভেজ মিয়া।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিরাপত্তার জন্য মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে, আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে চিকিৎসার জন্য থাকবে দুটি মেডিকেল টিম ও ৬টি অ্যাম্বুলেন্স। নিরাপত্তার স্বার্থে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে। ঈদের দিন সকাল থেকে শহরে কোনো যানবাহন চলাচল করবে না। ৫টি গেট দিয়ে মুসুল্লিরা মাঠে প্রবেশ করবে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি ও করছি। এবারও আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। এ ছাড়া পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে তাই আমাদের এই আয়োজন। এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে, বোম্ব ডিসপোজাল টিম ঢাকা থেকে আসবে। এ ছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত র্যাব, পুলিশ কাজ করবে। বাড়তি নিরাপত্তার মধ্যে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করবে এবার।
শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, পৌর মেয়র মো. পারভেজ মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আল আমিন হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মনতোষ বিশ্বাস, ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক গৃহবধূ এবং এক জঙ্গিসহ ৪ জন নিহত হন। ওই জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। তবে এ ঘটনায় ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসলমানদের উপস্থিতিতে ভাটা পড়েনি কোনো বছরেই। তবে করোনাকালে করোনার প্রকোপে ২ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত হয়নি।
এসজি