'সাজানো মামলায় মানহানির অপচেষ্টা করছে'
টাঙ্গাইলে এক কিশোরী ধর্ষণ কাণ্ডে মামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ, মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এনিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠে বইছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সংবাদ সম্মেলন করলেন কিশোরী ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের ছোট ভাই টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির। সোমবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
অভিযুক্ত বড় মনিরের ভাই টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির লিখিত বক্তব্যে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের চিহ্নিত হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা টাঙ্গাইলের শান্ত পরিবেশকে আবার অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অপ-প্রচার চালিয়ে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে। তাদের ষড়যন্ত্র সততার কাছে পরাজিত হবেই।
তিনি বলেন, বিগত দিনে টাঙ্গাইল শহর সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। তথাকথিত একটি পরিবারের কাছে টাঙ্গাইল শহর জিম্মি হয়ে পড়েছিল। সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদসহ আওয়ামী লীগের ৩০জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। সেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যার প্রতিবাদ করায় আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছিল। সেদিনের টাঙ্গাইল আর আজকের টাঙ্গাইল শহরের পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। কোন রাজনৈতিক হানাহানি, খুন, রাহাজানি নেই।
ছোট মনির বলেন, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে একটি সাজানো মামলা দিয়ে মানহানীর অপচেষ্টা করছে তথাকথিত সেই পরিবার। তারা টাঙ্গাইলের রাজনীতিকে আবার অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমার নির্বাচনী এলাকা গোপালপুর-ভূঞাপুর আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েক নেতা। তাদের সঙ্গে আরও সুর মিলাচ্ছে দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দু-চারজন রাজনৈতিক নেতা।
১৯৭৫ সালে খন্দকার মোস্তাক যেমন আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। তেমনই ওই ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের প্রিয় টাঙ্গাইলকে অশান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ইতোপূর্বেও একাধিকবার আমাদের নিয়ে ষড়য়ন্ত্রের ঘৃণ্য খেলায় লিপ্ত হয়েছে। কিন্ত বার বারই সততার কাছে-শেখ হাসিনার উন্নয়নের কাছে পরাজিত হয়েছে। টাঙ্গাইলের রাজনৈতিক বিষয়ে মাননীয় প্রধামন্ত্রী সব খবর রাখেন। তিনি সবই অবগত।
আরও বলেন, আজকে যারা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নানা সুবিধা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তারা একবার ভাবুন কাদের ত্যাগের জন্য এ সুবিধা পাচ্ছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা যে মেয়েকে দিয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিয়েছেন। সেই মামলার পর শহরে আমার ভাইয়ের শাস্তির দাবিতে মিছিল করিয়েছে কে আপনারা সবই জানেন। সত্যকে কখনও ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায়না। সত্য একদিন আপন গতিতে পরিস্ফুটিত হবে। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্র লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সত্য প্রকাশে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ পলু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা, সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও গণসঙ্গীত শিল্পী এলেন মল্লিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রউফ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসোহানুর রহমান সোহান, টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বালা মিঞা, করটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান চৌধুরী মজনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে গত বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ওই কিশোরী। এর আগে তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হতো। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকালে ওই কিশোরী আদালতে দণ্ডবিধির ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী এমপির বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হওয়ায় জেলার রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
এএজেড