ঈদকে ঘিরে শ্রীপুরে বেড়েছে ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাত্ম্য
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচতি ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে এই চৌরাস্তার বিভিন্ন বিপণিবিতানে কেনা-বেচা জমে উঠেছে। শপিংমলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেড়েছে মানুষের চলাচল, বেড়েছে যান চলাচল। আর এই সুযোগে তৎপরতা শুরু করেছে অপরাধীরা। ঈদকে ঘিরে নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলোতে। ক্রেতার সরগরম উপস্থিতির সুযোগে ছিনতাই করতে মাওনা উড়াল সেতুর নিচে ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ছিনতাইকারীদের ধরে থানায় ফোন দিলেও পুলিশ আসতেছে বলে দুই/তিন ঘণ্টা চলে গেলেও পুলিশ আসে না। তা ছাড়া থানায় দেওয়ার পর পুলিশ ব্যবসায়ীদের বাদী হতে বলে। বাদী হওয়ার ঝামেলা এড়াতে তারা আটক ছিনতাইকারীদের থানায় সোপর্দ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
এদিকে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী হওয়ার ভয়ে তাদের আটক করলেও থানায় সোপর্দ করতে চান না ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ফোন খুইয়েছেন মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা একাধিক ক্রেতা। পাশাপাশি ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে মূল্যবান মালামাল খুইয়েছেন অনেকে। এর ফলে ঈদকে ঘিরে মাওনা এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধিতে ক্রেতার পাশাপাশি চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
সম্প্রতি মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচ দিয়ে উত্তর পাশের কাটা দিয়ে ভিড়ের মধ্যে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন নারী পথচরাী তাসলিমা খাতুন। তার ব্যাগের চেইন কেটে নগদ টাকা ও সময় টিভি’র লগো সম্বলিত একটি চাবির রিং ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা।
মাওনা চৌরাস্তার বিভিন্ন শপিং মল ও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান শুরুর এক সপ্তাহ পর থেকে কিতাব আলী প্লাজা, ভাই ভাই সুপার মার্কেট, আব্দুল বাতেন পাইকারী মার্কেট, ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ার, আবুল হাসেম সুপার মার্কেট, মোবাইল মার্কেট, মালেক মাস্টার সুপার মার্কেট, ইয়াকুব আলী মাস্টার ১ নম্বর সুপার মার্কেটে দেদারছে বিক্রি শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে শপিং সেন্টার ও মার্কেটের সামনে থেকে অন্তত ১৫ জন ক্রেতার মোবাইল ছিনতাই করেছে ছিনতাইকারী চক্ররা।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ঈদের মার্কেট করতে আসা এক মহিলার ব্যাগ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয়রা একজন ছিনতাইকারীকে আটক করলেও অপর ছিনতাইকারী দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে তার সাথে হোসেন, আজহারুল রাকিব, মোফাজ্জল, জহিরুল ইসলাম রয়েছ। তারা ১০/১২ জনের একটি চক্র মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে। নারীরাও জড়িত রয়েছে এই সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে। এই চক্রের সদস্যরা সার্বক্ষণিক সেতুর আশপাশ এবং বিভিন্ন শপিং সেন্টার, মার্কেটে সার্বক্ষণিক অবস্থান নেয়। তাদের প্রত্যেকের সাথে ছুরিও থাকে। এখানে প্রতিদিনই নারী এবং পুরুষ ক্রেতাদের মোবাইল ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
তারা আরও জানান, ঈদ বাজার জমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চোর-ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায় চরম উদ্বিগ্নতার পাশাপাশি হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারা। কিন্তু প্রতিরোধের যেন কেউ নেই। দ্রুত এসব ছিনতাইরোধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
মাওনা চৌরাস্তা মালেক মাস্টার সুপার মার্কেটের লিবার্টি সুজ’র মালিক ব্যবসায়ীরা কফিল উদ্দিন জানান, বাজার কমিটি, ইরাজাদার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনসাধারণ ও ক্রেতাদের সতর্ক করতে প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীরা যাতে ভয় পায় সেভাবে ব্যবস্থা করতে হবে।
মাওনা চৌরাস্তা বনিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম রতন বলেন, স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ছিনতাইকারী চক্রের হাত থেকে নিজেকে ও মূল্যবান মালামাল রক্ষার্থে মাইকিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালালেও এখনো মার্কেটগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো: নাসিম বলেন, ছিনতাইয়ের বিষয়টি ব্যবসায়ীরা আমাকে অবগত করেনি। আপনার (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমি এই মাত্র বিষয়টি জানতে পারলাম। আজ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বাজারে টহল জোরদার করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এসআইএইচ