এমপির ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে মোবাইলে তুলে রাখা ধর্ষণের ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী কিশোরী। ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর থানায় দায়ের করা মামলায় দণ্ডবিধির ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে যৌন নিগ্রহের শিকার ওই কিশোরী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওই কিশোরীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে ফুফুর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পরিদর্শক তানবীর আহমেদ।
জানা যায়, বুধবার (৫ এপ্রিল) টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল সদর থানায় (১৭) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন তিন মাসের অন্ত:স্বত্তা এক কিশোরী। মামলায় বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাবকেও অভিযুক্ত করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনি টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুরের ছেলে ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বড় ভাই। এর পাশাপাশি তিনি টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর বাবা ও মা মারা গেছেন। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তার ভাইয়ের সাথে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই কিশোরী টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনির কাছে সহযোগিতা চান।
গোলাম কিবরিয়া বড় মনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে বাসায় ডেকে নেন। পরে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেন। ওই কিশোরী তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক যৌন নিগ্রহ করেন এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। পরে মোবাইল ফোনে তুলে রাখা ছবি দেখিয়ে বার বার ওই কিশোরীকে তানভীর হাসান ছোট মনির ধর্ষণ করেন। বর্তমানে ওই কিশোরী তিন মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
অন্ত:স্বত্তার বিষয়টি বড় মনিকে জানালে কিশোরীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেয়। সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনি তার শ্বশুর বাড়ি আদালত পাড়ায় জোর করে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য তাকে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন। এরপরও মেয়েটি গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে তাকে সেখানে আবারও ধর্ষণ করেন।
এরপর বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাব ওই কিশোরীকে মারধর করেন। এতে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ওইদিন রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেন। এরপর থেকেই তাকে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী।
মামলা দায়ের করার পর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তার শারীরিক (মেডিকেল) পরীক্ষা করা হয়। পরে দন্ডবিধির ২২ ধারায় জবানবন্দি দিতে তাকে আদালতে নেওয়া হয়।
এদিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিশোরীর শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সোয়াপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই কিশোরী। মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ