মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের মূলহোতা তাঁতী লীগ নেতা
নামের শেষে খাঁন হলেও পেশায় তিনি একজন মুরগি বিক্রেতা, পদ আছে তাঁতী লীগেও। কিন্তু তিনি মূলত মুরগি ব্যবসার আড়ালে মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতা। বলছি, ঢাকা জেলা উত্তর তাঁতী লীগের সহ-সভাপতি সাহাবুদ্দিন খানের কথা।
সম্প্রতি চুরি হওয়া একটি মোবাইল ফোন সাভারের আশুলিয়া থেকে উদ্ধার করে পুলিশ ইনভেস্টিকেশন ব্যুরো (পিবিআই)। সেই উদ্ধার হওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে অনুসন্ধান শুরু করে ঢাকাপ্রকাশ। ঢাকাপ্রকাশের অনুসন্ধানে উঠে আসে চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের এক ভয়ানক নেটওর্য়াকের তথ্য। যার মূলহোতা তাঁতী লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন খান।
ঘটনার শুরু গতবছরের ৩০ ডিসেম্বর। হাসান আলী (২৪) নামের এক যুবক ওইদিন দুপুরে আশুলিয়ার বাইপাইলে এসে বাস থেকে নেমে তার পকেটে হাত দিয়ে দেখেন তার ব্যবহৃত (ভিভো ভি-২০৪৩ মডেল) মোবাইলটি পকেটে নেই। তার মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে গেছে। পরে তিনি থানায় মোবাইল হারানো বিষয়ে একটি জিডি করেন।
পরে গত ২৫ মার্চ আশুলিয়ায় পলাশবাড়ীর বাতানটেক এলাকার এক মুদি দোকানীর কাছ থেকে তার মোবাইলটি উদ্ধার করে পুলিশ ইনভেস্টিকেশন ব্যুরো (পিবিআই)। তবে ওই মুদি দোকানী জানায়, মোবাইলটি তিনি ফজলুর রহমান নামের এক মোবাইল মেকানিকের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। পরে ফজলুর রহমান মুঠোফোনে জানায়, আমি সুমন নামের একজনের কাছ থেকে মোবাইলটি ক্রয় করেছি। ফজলুর রহমানের তথ্য সূত্রে সুমনের সাথে কথা বলে ঢাকাপ্রকাশ। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি বাইপাইল এলাকার মুরগি বিক্রেতা সাহাবুদ্দিন খানের কাছ থেকে মোবাইলটি ক্রয় করেছেন। পরে সাহাবুদ্দিনের সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করে ঢাকাপ্রকাশ।
ঢাকাপ্রকাশের অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁতী লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন খানের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড় এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে একটি মুরগীর দোকান আছে। দোকানের পাশেই শাহাবুদ্দিনের ব্যক্তিগত অফিস। যার ভিতরেই চলে চোরাই মোবাইল কেনা-বেচার কাজ। আশুলিয়ার নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে আনে চিহ্নিত চোর চক্রের সদস্যরা। পরে তাদের কাছ থেকে মোবাইলগুলো নামমাত্র দামে কিনে নেন এই শাহাবুদ্দিন। পরে মোবাইলের আইএমই পরিবর্তন করে তা অন্যত্রে বিক্রি করেন তিনি। অনেক মোবাইল আইএমই পরিবর্তন ছাড়াও বিক্রি করেন তিনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শুধু চোরাই মোবাইল বেচা-কেনা নয়। চোর চক্রের সদস্যদের কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তাদের ছাড়িয়ে আনতেও সহযোগিতা করেন তিনি। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মোবাইল চোরদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও উঠেছে শাহাবুদ্দিনের নাম। তবে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বারবারই পার পেয়ে যান তিনি। চালিয়ে যান চোরাই মোবাইলের রমরমা ব্যবসা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, সাহাবুদ্দিন যে চোরাই মোবাইল কম দামে ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করেন তা অবশ্য আশুলিয়ার বাইপাইল মোড় এলাকায় বেশিরভাগ লোক জানে। মুরগী ব্যবসার আড়ালে চোরাই মোবাইলের ব্যবসা করাই তার আসল কাজ। তবে তিনি রাজনীতি করায় কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। এ ছাড়া শাহাবুদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইলেও আইএমই নাম্বার নাই। সেটিও চোরাই মোবাইল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের এক অফিসার জানান, বাইপাইল থেকে মোবাইল চোর চক্রের বেশ কিছু সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহাবুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছে চোরাইকৃত মোবাইলগুলো বিক্রির বিষয়টি জানা যায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে সাহাবুদ্দিন খান বলেন, একটা মোবাইলের ব্যপারে আপনার কাছে কে কি বলল তা নিয়ে আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন। আপনি আমাকে চিনেন? আপনি আমাকে দেখেছেন?
চুরি হওয়া মোবাইলটা আপনার মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে মুঠোফোনের কল কেটে দেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর তাতী লীগের সভাপতি হাজী মোবারক হোসেন খোকন বলেন, আমি এ ধরনের কোনো ঘটনা জানতাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। সে যদি অপরাধ করে থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ