টাকার বিনিময়ে মাদকসেবীদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

সাভারে টাকার বিনিময়ে মাদকসেবীদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা 'ক' সার্কেলের পরিদর্শক নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে। গত ২১ মার্চ টাকার বিনিময়ে ওই কর্মকর্তা দুইজনকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন টাকার বিনিময়ে ছাড়া পাওয়া এক যুবক।
আরও অভিযোগ উঠেছে, ওই কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তি মাদকসেবীর কাছ থেকে উদ্ধার করা দুই বোতল ফেনসিডিল নিজেরাই পান করেছেন।
টাকার বিনিময়ে ছাড়া পাওয়া ওই যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ২১ মার্চ দুপুরে পৌর এলাকার বেদে পল্লীর বাসিন্দা আখি নামে এক মাদক বিক্রেতার কাছ থেকে দুই বোতল ফেনসিডিল কিনে রিক্সায় করে যাচ্ছিলেন সে। এ সময় রশিদ মেম্বারের মোড়ে পৌঁছালে তার রিক্সার গতিরোধ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে তাকে তল্লাশি করে ফেনসিডিল পেলে কর্মকর্তারা তাদের একটি গাড়িতে ওঠান।
তিনি আরও বলেন, গাড়িতে উঠে দেখতে পাই সেখানে আরও পাঁচজনকে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় কর্মকর্তারা আমাকে বলেন, যেখান থেকে ফেনসিডিল আনছিস সেখানে আমাদের নিয়ে চল আর কিছু টাকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর তোকে ছেড়ে দিব। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সেই স্থানে নিয়ে গেলে মাদক বিক্রেতা ওই নারীকে এক ব্যাগ ফেনসিডিলসহ তারা আটক করে। এরপর তারা আমাদেরকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গেণ্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়।
ওই যুবক বলেন, এ সময় আমাকে পাশের একটি হোটেল নিয়ে যায় তারা। সেখান থেকে আমার এক বন্ধুকে কল দিলে তারা কথা বলেন এবং এক লাখ টাকা দাবি করেন। আমার সেই বন্ধু ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। দুপুর শেষ হয়ে যখন সন্ধ্যা হয় তখন তারা আমাদের রেডিও কলোনি স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর আমি বিকাশে ১০ হাজার টাকা ব্যবস্থা করলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুই ব্যক্তি আমার কাছ থেকে পাওয়া ফেনসিডিল খেয়ে ফেলে। সেইসঙ্গে নিজেরাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিকাশের দোকানে গিয়ে ৯ হাজার ৮০০ টাকা উত্তোলন করে এবং আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ধামরাই থেকে আরও এক ব্যক্তিকে তারা আটক করেছিল। গাড়িতে বসে কর্মকর্তাদের মুখে আমি শুনতে পাই, তাকে ছাড়ানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা কোনো মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেই টাকা নিয়ে তাদেরই এক সোর্স পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে সেই লোক আরও ৪৭ হাজার টাকা দিলে তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাভার মডেল থানা ও উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১ মার্চ দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা ক সার্কেলের পরিদর্শক নুসরাত জাহান গেন্ডা এলাকায় সোনাই মোল্লা, আবু তাহের, রাশেদ ও বাধন মিয়া নামে ৪ মাদকসেবীকে নিয়ে আসে। এ সময় তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা ও এক মাসের দণ্ড প্রদান করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেন। এ ছাড়া আঁখি (১৯) নামে এক নারীকে ফেনসিডিল বিক্রির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এবং আলামত হিসেবে ১৬ বোতল ফেনসিডিল জব্দ দেখানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা ক সার্কেলের পরিদর্শক নুসরাত জাহান বলেন, ‘সেদিন আমরা অভিযান চালিয়েছি। তবে আমরা কাউকে ছাড়িনি। কে কোথা থেকে টাকা নিয়েছে আমি কিছুই জানি না। বিষয়গুলো আমি আমার টিমের কাছে জানব, এখন ফোনে কি বক্তব্য দিব। আপানার সঙ্গে কালকে সাভার এসে সরাসরি কথা বলব।’
এসআইএইচ
