শ্রীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ২
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার নির্মাণাধীন ভবনের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাতে কারখানার মালিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন নিহত মনোয়ার হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন। শুক্রবার (৩১ মার্চ) বেলা ১২টায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফুরকান খান।
আসামিরা হলেন-আলিফ এন্টারপ্রাইজের অধীনে কর্মরত ঠিকাদার ইব্রাহিম খান, ফোরম্যান রাব্বানী এবং স্কাইনীট পাওয়ার কোম্পানির মালিক আরশেদ আলী। তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম জানান, বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাতে বকশিগঞ্জ উপজেলার বগারচর গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে নিহত মনোয়ার হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে কারখানার মালিকসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। তাদের মধ্যে রাতেই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ওই ঘটনায় কাজের স্থানে কোনো রকম নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তার বালাই ছিল না বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিহতদের কয়েক সহকর্মী জানায়, ভবন নির্মাণে নিরাপত্তাজনিত কোনো ধরণের ব্যবস্থা ছিল না। হাতে গ্লাভস, পায়ে প্লাস্টিকের জুতা, মাথায় প্লাস্টিকের টুপি বা অন্য কোনো ধরণের নূন্যতম নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল না। ভবনটি শুরু থেকে তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণে নিরাপদ এবং নিরাপত্তার কোনো বালাই ছিল না। পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলো বালির নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ওই ভবনের সামনে দুটি বালুর ঢিবি রয়েছে। নিহত তিনজনের লাশ একটি ঢিবির মধ্যে বালুচাপা দেওয়া অবস্থায় ছিল। কারখানার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর তিন শ্রমিকের শরীরে আগুন ধরে গিয়েছিল। আগুন নেভানোর জন্যই তাদের বালুর ঢিবিতে ফেলা হয়েছিল।
নিহত তিন শ্রমিকদের কোনো ধরনের সেইফটি ইকুইপমেন্ট দেওয়া হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে কারখানাটির সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (রক্ষণাবেক্ষন) নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনার সময় কারখানায় উপস্থিত ছিলাম না।
তিনি আরো বলেন, মরদেহ বালিচাপা থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরার্মশ দিয়ে তিনি মুঠোফোন কেটে দেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রীপুরের মাওনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন রায়হান জানান, আমরা নিহতদের মরদেহ বালির নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় দেখতে পাই এবং উদ্ধার করি। তাদের শরীর ঝলসানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে কি কারণে লাশ বালি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল তা বলতে পারছি না।
ওই ঘটনার পর বিদ্যুৎ কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (মাওনা জোনাল) অফিসের উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আহমদ শাহ আল জাবের। তিনি আরও জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ আমাদের দক্ষিণ পাশের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি কেওয়া পূর্ব খণ্ড এলাকার আরমাদা স্পিনিং মিলস লিমিটেড-২ এ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন-নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর কচ্ছপিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে পিয়াস (২০) ও একই গ্রামের বেলাল সওদাগরের ছেলে পাভেল (২৩) এবং জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার বগারচর গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে মনোয়ার হোসেন (২৫)। তারা আলিফ এন্টারপ্রাইজের অধীনে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ওই কারখানায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিল বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ ও সার্ভেয়ার মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, স্কাইনীট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে আরমাদা স্পিনিং লিমিটেড কারখানাটি কিনে নেয়। তাদের মধ্যে লেনদেন হলেও কাগজপত্র সম্পাদন এখনও বাকী রয়েছে বলে জানা গেছে। আলীফ এন্টারপ্রাইজ কারখানা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়েছে। আলীফ এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে ঠিকাদার ইব্রাহীম কাজের অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করছে। ঠিকাদার ইব্রাহীমকে শ্রমিক সরবরাহ করেছে গোলাম রব্বানী।
এসআইএইচ