‘সবকিছুর দাম বাড়ছে, আমাগো বেতন কেন বাড়ে না’
চাল-ডাল, তেল-নুন সবকিছুর দামই তিন-চার গুণ হইছে। এমনকি বাসার ভাড়াও বাড়ছে। জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে মাছ-মাংস তো দূরের কথা শাকসবজি দিয়ে খাইতেও আমাগো হিমশিম খেতে হয়। সবকিছুরই দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাগো বেতন কেন বাড়ে না?- বড্ড অভিমানের সুরে কথাগুলো বলছিলেন পোশাকশ্রমিক রাবেয়া আক্তার।
রাবেয়া আক্তারের বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর এলাকায়। ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল তার, ভালোই চলছিল সংসার। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে হঠাৎই তার জীবনে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে রাবেয়ার। এর মধ্যে রাবেয়া এক ছেলে সন্তানের জননীও হয়ে গেছেন। শুধু ছেলেটির মুখের পানে চেয়ে চলে আসেন ইট-পাথরের শহর ঢাকা জেলার আশুলিয়ায়। এখানে এসে চাকরি নেন হামীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায়। কিছুদিন আগে অসাবধানতার কারণে আগুনে রাবেয়ার ছেলের পা পুড়ে যায়। সেই পোড়া পায়ের ব্যান্ডেজ খুলতে রাবেয়া এসেছিলেন হামিমের ২নং গেট এলাকার রোমানা ফার্মেসিতে। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের দাম ও তার জীবনযাপন নিয়ে সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশ-এর।
এসময় রাবেয়া আক্তার বলেন, গার্মেন্টস সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। এত কষ্ট মানুষ কেমনে করে? ভোরের আজানের আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়। রান্নাবান্না করা, গোসল করা, খাবার খাওয়া, ভোঁদৌড়ে ফ্যাক্টরিতে সময়মতো পৌঁছাতে হয়। আবার দুপুরে মাত্র ১ ঘণ্টা খাবারের সময় পাই। বাসায় যাওয়া-আসায় সময় চলে যায় অর্ধেক। বাকি ৩০ মিনিটে নিজে খাই, ছেলেকে খাওয়াই, ছেলের কান্না থামানো, আবার ভোঁদৌড়। খুব কম দিনই ৫টার দিকে ছুটি হয়। বেশির ভাগ দিনগুলোতে রাত ৮টা, ১০টা, ১২টা এমনকি শিপমেন্ট থাকলে সারারাতই কাজ করতে হয়। এত কষ্টের পরও মাস শেষে বেতন পাই ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যা দিয়ে বাসা ভাড়া, দোকানের বিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবের খরচ, ঔষধ খরচ, ছোট্ট ছেলেটার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
কথাগুলো বলতে গিয়ে রাবেয়ার চোখ ভিজে যায় অশ্রুতে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাবেয়া বলেন, যেই চাল ৩৮ টাকা ছিল, সেই চাল এখন ৫২ টাকা কেজি। ৮০ টাকার তেল ১৮০ টাকা। গরুর মাংসের কথা বাদই দিলাম, ফার্মের মুরগির কেজিও ২৫০ টাকা। আগে পাঙাশ মাছের দাম ছিল কম। এখন পাঙাস মাছও কেনা লাগে ১৮০-২০০ টাকা কেজিতে। শাক-সবজি দিয়ে ভাত খাব, তার দামও বেশি। বেগুন,ভেন্ডি, পটল সবই ৮০ টাকা কেজি। দুই বছরে বাসা ভাড়া বাড়ছে ১২০০ টাকা। কিছুদিন আগেও ডিমের হালি ছিল ২৮ টাকা, এখন কিনতে হয় ৫০ টাকায়। যা কিছু কিনতে যাই তার দামই তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে। তাহলে আমাদের বেতন কেন বাড়ে না? আমাদের কি বাঁচার অধিকার নাই?
তিনি আরও বলেন, সব কষ্টই গরিব মানুষের। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। একে তো কষ্ট করি। কষ্টের তুলনায় বেতন নাই। যা বেতন পাই, তা মুদি বাজার ও বাসাভাড়া দিতেই শেষ হয়ে যায়। তারপর ধারদেনা করে চলতে হয়। একটু ভালো খাবার তো দূরে থাক, তিনবেলা ডাল-ভাত খেয়ে থাকাটাই এখন কষ্ট। আমাদের মতো গরিব মানুষের জীবন সামলানোটাই এখন দায়।
পোশাকশ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সব খরচই বেড়েছে কিন্তু বেতন বাড়েনি। বর্তমানে জিনিসপত্রের যা দাম তাতে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা হওয়া দরকার। আসলে কারখানার মালিকরা তো চাইবেই কম বেতনে বেশি কাজ করাতে। তাই তারা বেতন বাড়াতে গড়িমসি করছে। পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর জন্য শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এসজি