রোজায় ৮০ টাকার নিচে সবজি নেই, নীরব প্রশাসন

লাগামহীন বাজারে নেই মনিটরিং। প্রথম রোজার রাতেই ব্যবসায়ীদের ঈদ লেগে গেছে। যে যেভাবে পারে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। কিশোরগঞ্জের বেশিরভাগ মুদি দোকানগুলোতে নেই মূল্য তালিকা। মূল্য তালিকা থাকলেও পণ্যের মূল্যে নেই সামঞ্জস্য। বাজারে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ৪ মাস ধরে বাজার মনিটরিং টিম লাপাত্তা।
বাজারে পণ্যের চাহিদার চেয়ে আমদানি বেশি থাকার পরও বাজারের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও মাছ, মাংস, কাঁচা সবজির দাম বৃদ্ধির কারণে বিপাকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো। কোন পণ্যের দামে স্বস্তি নেই বলে জানিয়েছেন বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষজন।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বড় বাজার,পুরান থানা বাজার ও কাঁচারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজায় প্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম অনেক বেশি। এদিকে কাঁচা সবজি, মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি রান্নার প্রধান উপকরণ মশলার দাম অনেক চড়া। গুড়া মশলাসহ অন্যান্য গরম মশলার দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে দেখার মতো যেন কিশোরগঞ্জে কেউ নেই। জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের বাজারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে একটি চক্র। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও নিয়ম শৃঙ্খলার অভাবের কারণেই বাজারের এমন হাল।
বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া মূল্যে ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে এবং মূল্য তালিকা নিছক একটা বোর্ড মাত্র। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যবসায়ীরা লাগামহীনভাবে ছুটছে। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি, রমজানকে ঘিরে সেই সকল খাদ্য পণ্যও চলে গেছে সিন্ডিকেটের কব্জায়।
বাজার করতে আসা ক্রেতা আলমগীর হোসেনের বলেন, আয়ের থেকে এখন ব্যয় বেশি। সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে ব্যাগ ভরে বাজার বাড়িতে নেওয়া যায় না। মাছ কিনলে সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হয়। মাংসের দাম শুনলে তো মুখের রুচিই চলে যায়। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের সংসার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজকের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়শ, বেগুন, বরবটি, শশা, শিম, করলা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এ ছাড়াও বড় একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-৭ টাকা।
চিনি প্রতি কেজি ১১৪ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। আটা প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, ময়দা ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন ১৬৫ টাকায়, বোতল ১৮৫ টাকায়। সরিষার তেল ২১০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকায়। ছোলা বুট কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম নির্ধারিত করা। ভালো ছোলা প্রতি কেজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। দোকানিরা বলছে জিনিস যেটা ভালো তার দাম একটু বেশি।
কাঁচারি বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহীন বলেন, মানুষ এখন হিসাব করে বাজার করে। যারা ব্যাগ ভর্তি বাজার করত তারাও হিসেবের ভিতরে বাজার করছে। বাজারে সবজির তেমন চাহিদা নাই। সবজি বিক্রি না করতে পারলে সবজি পঁচে যায়। আগের তুলনায় মানুষ এখন সবজি কিনে কম।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু বলেন,কিশোরগঞ্জের কৃষি বাজার কর্মকর্তার গাফলতির কারণে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শহরের বাজারগুলোতে কোনো মনিটরিং হচ্ছে না। কৃষি বাজার কর্মকর্তা ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তাকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভেজালমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে কৃষি বাজার কর্মকর্তা ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, পণ্যের বাজার মূল্য জেলার বাজার কর্মকর্তারা দেখবেন। এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এসআইএইচ
