জাতীয় পতাকার আদলে বেগুনি-সবুজ ধানক্ষেত
শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে নয়, ফসলের ক্ষেতে সবুজ-বেগুনি ধানের চারা লাগিয়ে জাতীয় পতাকার আদলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় পতাকার রূপ। আর এই কাজটি করেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল হক। গ্রামীণ পিচঢালা সড়কের দুই পাশের যেদিকেই চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ। টেংরা বাজার পার হলেই মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়ক ঘেঁষা ধানের জমিতে চমৎকারভাবে জিঙ্ক সমৃদ্ধ সবুজ আর বেগুনি ধান মিশ্রণে জাতীয় পতাকার এক অনন্য শস্য চিত্র কর্ম চোখে পড়ে। জাতীয় পতাকার চতুর্ভুজের বেশিরভাগ জুড়ে লাগিয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ জাতের সবুজ রঙের ধান। মাঝখানে বৃত্ত নির্মাণ করেছেন জিঙ্ক সমৃদ্ধ বেগুনি রংয়ের ধান গাছ দিয়ে । পতাকার খুঁটি ব্যবহার করেছেন সবুজ রঙের ধান গাছ লাগিয়ে। এরপর পতাকার অংশটুকু আকর্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান রাখতে পুরো জমিতে রোপণ করেছেন বেগুনি ধান ।
সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজ ভূমিতে একটি উড়ন্ত জাতীয় পতাকা দেখে। এই পথে চলাচলকারী পথচারীরা থমকে যান শস্য চিত্রের পতাকা দেখতে। এটা দেখে তারা বিমোহিত হন। আগ্রহ নিয়ে কেউ কেউ ছবি তোলেন সবুজ ও বেগুনি রঙের ধান ক্ষেতের। মোবাইলে ধারণ করা ছবি শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল হক নিজের ফসলের মাঠে সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রতিকৃতি। গত বছর একই জমিতে শস্য চিত্রে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তুলে তিনি আলোচনায় আসেন।
আবহমানকাল থেকে সবুজ রঙের ধান গাছই দেখে এসেছে বাংলার কৃষক। কিন্তু সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে ব্যতিক্রমী এই ধান চাষ দেখতে ভিড় করছে মানুষ। প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে ধানের সৌন্দর্য দেখতে আসছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় সবুজের মাঠের মাঝখানে বেগুনি রঙ। সবুজ ধানের বেষ্টুনির কাছে গেলে মনে হয় বেগুনি রঙের জায়গাটুকু কোনো আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধান। কিন্তু না, এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতা ও কান্ডের রং বেগুনি। যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তা দেখতে অনেকটাই জাতীয় পতাকার আদলে। এ সময় কথা হয় জাতীয় পতাকার আদলে শস্য চিত্র আঁকা কৃষক এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে প্রথম তার এক বিঘা জমিতে জিঙ্ক বেগুনি ধান রোপণ করেন। সেই বছর দারুণ ফলন হয় বেগুনি ধানের। এটা দেখে তার ব্যতিক্রমী চিন্তা আসে মাথায়। এর পর তিনি মায়ের প্রতি ভালোবাসা রেখেই জমিতে নান্দনিক ভাবে ফুঁটিয়ে তুলেন ‘মা’ লেখা এক অনন্য শস্য চিত্রকর্ম। এক বিঘা জমিতে বাংলায় 'মা' শব্দটিকে শস্যচিত্রে রূপ দেন তিনি চমৎকার ভাবে। সেই সময় আগত দর্শনার্থীরা সেই মা লেখা শস্যচিত্র দেখে দারুণ প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে এই বছর জাতীয় পতাকা শস্য চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি।
এনামুল হক বলেন, প্রথমে সুতা দিয়ে মেপে জমিতে জাতীয় পতাকার গঠন তৈরি করেন। এরপর সেই অনুযায়ী রোপন করেন দুই জাতের ধানের চারা। দেশ ও পতাকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেই তার এই আয়োজন বলে জানালেন।
পথচারী আলমগীর হোসেন বলেন, সবুজ-বেগুনিতে এত সুন্দর ধানের জমি আর দেখেনি। লোকমুখে শুনে জমি দেখতে এখানে আসা। যারা এই জাতীয় ধান আবাদ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এ জাতীয় ধান আবাদ করতে এখন আমারও শখ হয়েছে।
আরেক পথচারী খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি কখনও এ জাতীয় ধান দেখেনি। ফসলের মাঠে সবুজ-বেগুনিতে বাংলাদেশের পতাকা হয়ে গেছে। যা দেখে মনে হয় এইটি আল্লাহর রহমত। সবুজ-বেগুনিতে জাতীয় পতাকা দেখে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
মো: মানিক মিয়া বলেন, ধান ক্ষেতের চারপাশে সবুজ রঙের ধান আর মাঝখানে বেগুনি রঙের ধান রোপন করায় দেশের জাতীয় পতাকার আদলে হয়েছে। যা দেখতে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই জমির কাছে গিয়ে একটি সেলফি তুলেছেন বলে জানান তিনি।
শিশুপল্লী প্লাসের আর্ট বিভাগের প্রধান চিত্রকর ভাস্কর মিলন বর বলেন, আর্টের মাধ্যমে যেকোনো শিল্পকর্ম ফুঁটিয়ে তুলতে পারা একটি শৈল্পিক গুণ। এতে মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা নানা প্রতিভার বিকাশ ঘটে এসব শিল্পকর্মে। কৃষক এনামুলের এমন শস্য ক্ষেতে শিল্পকর্ম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। শস্য ক্ষেতে মা লিখা আবার দেশের পতাকা আঁকা একটি নান্দনিক শিল্পকর্ম।
এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাতের সরকার জানান, এনামুল পরিশ্রমী কৃষক। দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এ কাজ কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ধানক্ষেতটি দেখলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, 'একজন কৃষকের দেশের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তার জমিতে জাতীয় পতাকার আদলে শস্য চিত্র ফুটিয়ে তুলে সত্যিই প্রশংসার কাজ করেছেন। ইতিপূর্বেও তিনি শস্য চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।