টাঙ্গাইলের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে ৫৬ নারী কর্মকর্তা
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষা অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিস, মেয়র, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ বিভিন্ন শীর্ষ পদে থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন ৫৬ নারী কর্মকর্তা। তারা কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সাফল্যের ছাপ রেখে চলছেন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অগ্রযাত্রার পথে সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইল জেলার সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বেসরকারি একটি সংগঠনের তথ্যমতে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষা অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিস, মেয়র, ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ডসহ শীর্ষ পদে ৫৬ নারী সদস্য নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংসারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজে দক্ষতার সাক্ষর রাখছেন। বাল্য বিয়ে, যৌতুক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সমাজকে মাদক-দুর্নীতিমুক্ত করতে ভূমিকা রাখছেন।
তথ্যমতে, জেলার ১২টি উপজেলার ৬টিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ৬টিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। কয়েকটি উপজেলায় ইউএনও এবং এসিল্যান্ড দুইজনই নারী। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ১১ নারী। তারা হচ্ছেন- স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শামীম আরা রিনি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) নাফিসা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আক্তার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা) ফারজানা ইয়াসমিন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জেএম শাখা) নাজিয়া হোসেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সাধারণ শাখা) সঞ্চিতা বিশ্বাস।
এ ছাড়াও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসএ শাখা) নাহিয়ান নূরেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি শাখা) সিনথিয়া হোসেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভিপি সেল ও আরএম শাখা) সাবরিন আক্তার এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (লাইব্রেরি শাখা) জান্নাতুল নাঈম বিনতে আজিজ।
জেলার ৬টি উপজেলার নির্বাহী অফিসাররা হচ্ছেন- টাঙ্গাইল সদরে রানুয়ারা খাতুন, ঘাটাইলে মুনিয়া চৌধুরী, বাসাইলে পাপিয়া আক্তার, সখীপুরে ফারজানা আলম, মধুপুরে শামীমা ইয়াসমীন এবং দেলদুয়ারে ফারহানা আলী।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্বে আছেন ৬ জন। তারা হচ্ছেন- গোপালপুরে মাশতুরা আমিনা, ধনবাড়ীতে ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা, দেলদুয়ারে সূচি রাণী সাহা, বাসাইলে আরিফুন্নাহার রিতা, ভূঞাপুরে তামান্না রহমান জ্যোতি এবং সখীপুরে হামীম তাবাসসুম প্রভা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন হিসেবে ডা. ফারজানা তাহের মুনমুন ও মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. শিমু সাহা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও ধনবাড়ীতে ডা. শাহানাজ সুলতানা ও বাসাইলে শার্লি হামিদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলার শিক্ষা বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী ১০ জন হচ্ছেন-জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম, শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক বীথি খান, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোকেয়া খাতুন, গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা, সদর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সালমা ইসলাম, মির্জাপুর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহনাজ পারভীন, ভূঞাপুরে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার তাহমিনা আক্তার, গোপালপুরে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কামরুন নাহার, দেলদুয়ারে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোসাম্মৎ খাদিজা এবং কালিহাতীতে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জুলিয়া আক্তার।
জেলা কারাগারের মহিলা ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রিজওয়ানা হাসিন, জেলা তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন তাসলীমা জান্নাত, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রয়েছেন কণিকা মল্লিক, জেলা যুব উন্নয়ন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক ফাতেমা বেগম এবং সহকারী পরিচালক রওশন আরা বেগম। বিসিক জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম ও জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক ফারহানা পারভীন।
জেলার একমাত্র প্রথম নারী মেয়র হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার। ভূঞাপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মোছা. নার্গিস বেগম। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন মির্জাপুরে শরিফা বেগম, ভূঞাপুরে নাজমা সুলতানা ও মধুপুরে শিরিন আক্তার।
জেলার কৃষি বিভাগে উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে রয়েছেন পাঁচজন নারী। তারা হচ্ছেন- গোপালপুরে শামিমা আক্তার, সদরে রুমানা আক্তার, সখীপুরে আয়শা আক্তার, ঘাটাইলে বিলশাদ জাহান, কালিহাতী ফারাহানা মামুন।
তা ছাড়াও টাঙ্গাইল পুলিশ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে ফারিয়া আফরোজ ও জেলার মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে শাহিনা আক্তার রয়েছেন। জেলা পরিবার-পরিকল্পনা অধিপ্তরের সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন আইভি ইয়াছমিন।
নারী কর্মকর্তারা জানান, দেশের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক সমস্যা দূর করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। মাঠ প্রশাসনের কাজে সমন্বয় ও তদারকি, জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন তারা। বুধবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের নারী কর্মকর্তারা প্রত্যেক নারীকে তার অধিকার সম্পর্কে সজাগ থাকতে পরামর্শ দেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম জানান, সংসারের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে কর্মস্থলের দায়িত্ব পালন করছেন। এ জন্য প্রতিনিয়ত নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করে তিনি কাজ করছেন বলেও জানান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) নাফিসা আক্তার জানান, নারী-পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। সবক্ষেত্রেই নারীদের অবদান এখন বেশি। নারীরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে শরিক হয়ে মেয়েরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিয়া চৌধুরী ঢাকা জানান, পুরুষ শাসিত সমাজে যেখানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের চিন্তাই করা যেতো না সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বগুণে নারীরা আজ সমহিমায় উদ্ভাসিত।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফারজানা তাহের মুনমুন জানান, স্বাস্থ্য বিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারা কাজ করছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে কখনো দুর্বল মনে হয়নি। মাতৃত্ব, সন্তান, সংসার এবং পরিবার-এই বিষয়গুলোর সাথে একজন নারী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসবের জন্য একজন নারীকে অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানান, প্রজাতন্ত্রে টাঙ্গাইল জেলায় যারা কাজ করছেন- তাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রায় অর্ধেক নারী সদস্য রয়েছেন। ১২টি উপজেলা প্রশাসনে ৬ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। জেলায় কর্মক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত নারীদের কোনো প্রতিবন্ধকতার কথা শুনেননি।
এসআইএইচ