সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেল চরাঞ্চলের মানুষ
দীর্ঘ উত্তাল নদী পেরিয়ে শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার চরাঞ্চলে ৫৭টি গ্রামের ১২ হাজর ৫৫৩ পরিবার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। শুক্রবার (৩ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে নড়িয়ার নওপাড়ায় পদ্মা নদীর সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন শরীয়তপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।
শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপাড়া, জাজিরার কুন্ডেরচর, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর, মতলবের, একলাশপুর ও জহিরাবাদ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নগুলোতে ৫৭টি গ্রামে জনবসতি রয়েছে।
আর এই গ্রামগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন করা ছিল কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু ২০১৯ সালে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেন। শরীয়তপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে দেড় কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে প্রথমে বিদ্যুৎ নেয়া হয় নড়িয়ার নওপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়নে।
নওপাড়ায় ১০ মেগওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মান করা হয়। ওই উপকেন্দ্র থেকে ৫৭টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চরাঞ্চলে ২৭৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আর নড়িয়ার নওপাড়া ও মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় পদ্মা নদীর ওপরে ৮ টি খুঁটির মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়েছে।
ওই সঞ্চালন লাইন দিয়ে ৫০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাবে। বর্তমানে চরের সাড়ে ১২ হাজার গ্রাহকের ১ দশমিক ৫২ মেগওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। চরাঞ্চলে কৃষি ও মৎস ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাকি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।
নওপাড়ার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন, এতদিন পর আল্লাহ আমাগো মুখের দিকে তাকাইছে। আমরা চরের মানুষ মন্ত্রী সাবরে ধন্যবাদ জানাই। হুনছি অহন যেমনে লাইন দিছে নদী ভাঙ্গনে কোন সমস্যা হইবো না।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান বলেন, এখন চরাঞ্চলে বিদ্যুতের কারণে কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠতে পারে।নদী ভাঙন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুতের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাই এজন্যই নদীর ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ২০২০ সালে এই চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আনা হয়।
শরীয়তপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, মানবতার ফেরিওয়ালা সেরাদের সেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্যই চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। চরাঞ্চল কৃষি ও মৎস ভিত্তক শিল্প খাতের সম্ভবনার জায়গা। শরীয়তপুরের সবজি ইউরোপের বাজারে যাচ্ছে,এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রক্রিয়া হচ্ছে। অবহেলিত এ জনপদ এখন আলোয় আলোকিত করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো.পারভেজ হাসান,পুলিশ সুপার সাইফুল হক, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লতিফ সরদার, মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ আলী, শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান প্রমূখ।
এএজেড