কব্জিবিহীন হাতে লিখে জান্নাতুল পেল জিপিএ-৫
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারী আশুলিয়ার নবীনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসার ছাদে বিদ্যুৎ সঞ্চালক তারে জড়িয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের দুই হাত পুড়ে যায়। পরে জানুয়ারী মাসের ২৭ তারিখে তার হাতের কব্জিসহ কেটে ফেলা হয়। অন্যদিকে বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মামা ও খালার সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে কোন মতে দিনপাড় হচ্ছে তাদের। এতোসব প্রতিবন্ধকতাও দমাতে পারেনি জান্নাতুলকে।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দুই হাতের কব্জিবিহীন হাতে লিখে এবার এইচএসসিতে জান্নাতুল পেয়েছেন জিপিএ - ৫। এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলো জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এই শিক্ষার্থী। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা প্রকাশকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নিলুফা বেগম জিপিএ-৫ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সাভারের আশুলিয়ার বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করে জান্নাতুল ফেরদৌস। জান্নাতুল ফেরদৌস কুমিল্লা জেলার চাটখিল উপজেলাধীন মানিকপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। সে তার পরিবারের সাথে আশুলিয়ার পল্লীবিদুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।
বাব-মায়ের একমাত্র সন্তান জান্নাতুল। বাবার সাথে মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মামা ও খালার সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে কোন মতে দিনপাড় হচ্ছে তাদের। যেহেতু মামা-খালার বাসায় থেকে তার পড়ালেখা, সেহেতু তাদের পক্ষে লেখাপড়া অতিরিক্ত কর যোগান দেওয়া সম্ভব ছিল না। মা তাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়ে অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। টাকার অভাবে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে সে। কিন্তু কোন বাধা তাকে আটকাতে পারিনি।
এ ব্যপারে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নিলুফা বেগম জানান, তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। যার কারনে পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ বহন করা তার জন্য খুবই কষ্ট সাধ্য। তাই তিনি সবার নিকট জান্নাতুলের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, অনেক সময় অনেকে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে কেই এগিয়ে আসেনি, শুধু মাত্র ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ছাড়া। চেয়ারম্যান সাহেব ওর পড়াশোনার জন্য আমাদেরকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। আমি ডাক্তার হয়ে সকলের সেবা করতে চাই। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার বাবা না থাকায় মা আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছেন। তার একার পক্ষেও সম্ভব না। আমার বড় খালাও আমাদের অনেক সহযোগিতা করেন। বর্তমানে তাদের সাথেই থাকি। খালা-খালুই বর্তমানে আমার দেখাশোনা করেন।
জান্নাতুল আরও বলেন, আমি অনেক কষ্টে হাজী মতিউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করি। পরে আমার পরিবারের পক্ষে আমার কলেজের পড়াশোনা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্যার আমাকে পড়াশোনার জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতার করেন। পাশাপাশি আমার স্কুলের স্যার-ম্যাডামরাও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
এএজেড