৬৪ দিনে ৬৪ জেলা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করলেন ইউসুফ
টানা ৬৪ দিন পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ৩৬০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে রাজবাড়ীতে ফিরলেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় ইউসুফ ইকবাল মন্ডল (২২) নামের এক যুবক। আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রাজবাড়ী শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে তিনি দেশের ৬৪ টি জেলা পায়ে হেটে ভ্রমণের যাত্রা সমাপ্ত করেন।
তিনি রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছে প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্না করেন। এসময় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় স্বজনরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এর আগে গত ১০ নভেম্বর কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তিনি পায়ে হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন। ইউসুফ ইকবাল মন্ডল রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের তোফাদিয়া গ্রামের মোঃ দিলবার মন্ডলের ছেলে এবং রাজবাড়ী ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্র। ৩ ভাইয়ের মধ্যে ইউসুফ সবার ছোট।
রাজবাড়ীতে পৌঁছে ইউসুফ ইকবাল বলেন, জীবন নিঃশেষ হয় মাদক কারণ ক্রিয়াই করতে পারে জীবন সাধন। আপনার রক্তে বাঁচে অন্যের জীবন, রক্তদানে বাড়ে আত্মার বাঁধন, নিজে রক্ত দেই অন্যকে উৎসাহিত করি। আর কেটোনা গাছ, নিতে দাও বুকভারা নিঃশ্বাস এই তিনটি স্লোগানে সবাই সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে ৬৪ দিনে দেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণের উদ্যোগ গ্রহণ করি।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজবাড়ীতে এসে পায়ে হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণ সমাপ্ত করলাম । এর আগে গত ১০ নভেম্বর কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পায়ে হাঁটা শুরু করি। আমি আমার এলাকার বড় ভাই ও নিজের উদ্যোগে এ যাত্রা শুরু করি। চলতি পথে মাদকের ভয়াবহতা, রক্তদানে উৎসাহ এবং পরিবেশবান্ধব গাছ না কাটা এ তিনটি বিষয়ে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
তিনি আরও বলেন, আমি ৬৪ দিনে ৩ হাজার ৩৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করি। আমি প্রায় প্রতিদিন পায়ে হেঁটেছি সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার এবং সর্বনিম্ন ২৫ কিলোমিটার গড়ে ৫২ কিলোমিটার পথ। ৬৪ দিনের এই মিশনে আমি পথে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইনি। আমি যে জেলায় গিয়েছি সেই জেলার মানুষেরা আমাকে সাহায্য সহযোগীতা করেছে। বিশেষ করে প্রশাসনের দিক থেকেও আমি সর্বোচ্চ সাপোর্ট পেয়েছি।
এই সময় আমি ৬৪ জেলের মাটি সংগ্রহ করে এনেছি। আমাকে ৬৪ দিনে যারা সাহায্য সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে আগামী দিনে আমি পায়ে হেঁটে হিমালয়ে যেতে চাই এবং পায়ে হাটার বিশ্ব রেকর্ড করতে চাই। তার জন্য সরকারি কিংবা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। স্পেন্সার ছাড়া সামনে আগানো সম্ভব না। আমি যদি পৃষ্ঠপোষকতা পায় তাহলে আমি এটি চালিয়ে যেতে পারবো। আগামী দিনে আমার মিশন ও ভিশন গুলো সফল করতে সবার সহযোগিতার চায়।
স্থানীয় কালুখালী টুডে নামক অনলাইন ভিত্তিক সংগঠনের পরিচালক ও নাট্যকর্মী মোঃ সেলিম মাহাবুব বলেন, গত ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেছে ইউসুফ যেটা আমাদের রাজবাড়ী জেলার জন্য একটা বড় পাওয়া। ইউসুফ দরিদ্র পরিবারের একজন ছেলে।
সে তার নিজের অর্থায়নে পায়ে হাঁটার কার্যক্রম শুরু করে। ইউসুফ ভালো মনের একজন ছেলে। ইউসুফকে কেউ সহযোগিতা করলে ও পায়ে হেঁটে হিমালয়ে যাবের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা বিভিন্ন সময়ে তার এই ভ্রমণ পেজের মাধ্যমে প্রচার করেছি।
উল্লেখ্য, এর আগে পায়ে হেঁটে ২৪ ঘণ্টায় ইউসুফ খুলনা থেকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ১৩০ কিলোমিটার এবং ১৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে হেঁটে আসার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এছাড়া নিজেকে ফিট রাখতে প্রতিদিন হাঁটেন।
এএজেড