৭১ টাকায় মোরগ পোলাও, ক্রেতাদের ভিড়
৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ-পোলাও বিক্রি করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন টাঙ্গাইলে অনার্স সম্পন্ন করা ও পড়ুয়া স্থানীয় তিন যুবক। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এমন উদ্যোগ অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। টাঙ্গাইল পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিস চত্বরে প্রায় ৩ মাস ধরে লাযীয বিরিয়ানী নামে ভ্রাম্যামাণ হোটেলটিতে ৭১ টাকায় খাবার পাওয়া যাচ্ছে। কম দামে মোরগ পোলাও বিক্রির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রেতারা।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় বীরদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে এর মূল্য ৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ পোলাওয়ের দামের ৭০ টাকা নিজেরা নেন। বাকি ১ টাকা জমা রেখে দেন হতদরিদ্রদের মাঝে খাবার সরবরাহের জন্য।
দেখা যায়, পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিস চত্বরে খোলা জায়গায় বসেছে ‘লাযীয বিরিয়ানী’ নামের ভ্রাম্যামাণ হোটেলটি। এতে ক্রেতারা বসে ৭১ টাকার মোরগ পোলাও খাচ্ছেন। খাওয়া শেষে প্লাস্টিক জারে পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হোটেলটিতে কোনো বাবুর্চি বা শ্রমিক নেই।
এদিকে পৌর শহর ঘুরে দেখা যায়, হাজী বিরিয়ানী হাউসে ডিমসহ মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৫০ ও ফুল প্লেট ৩০০ টাকা, নান্না বিরিয়ানীতে শাহী মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৫০ ও ফুল প্লেট ২৮০ টাকা, নবাব বিরিয়ানী হাউজে মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৪০ টাকা ও স্পেশাল শাহী বিরিয়ানী হাউজে মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৪০ ও ফুল প্লেট ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ লাযীয বিরিয়ানী হোটেলে মাত্র ৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ পোলাও।
ওই ভ্রাম্যামাণ হোটেলটির উদ্যোক্তা এলেঙ্গা শামসুল হক মহাবিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের হিসাব বিজ্ঞানের ছাত্র আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রাজীব হোসেন, সাদিক ও তিনি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। কারোর চাকরি ভালো লাগেনি। এ কারণে তারা বাড়িতে ফিরে আসেন। তারা নিজেদের উপার্জনের পাশাপাশি সমাজের জন্য ‘কিছু করার’ চিন্তা করেন। সেই ভাবনা থেকেই হোটেল করা ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে তাদের ভ্রাম্যামাণ হোটেলের মোরগ পোলায়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ টাকা। এর মধ্যে ১ টাকা সমাজের হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খেতে না পারা ব্যক্তিদের প্রতিদিনই জনপ্রতি জমা হওয়া ১ টাকা থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ব্যতিত ৫ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হোটেল খোলা থাকে। গড়ে প্রতিদিন তাদের ১০-১২ কেজি চালের মোরগ পোলাও বিক্রি হচ্ছে। ওই পরিমাণ চালে ১০০-১২০ প্লেট মোরগ পোলাও তৈরি হয়ে থাকে।
জানা গেছে, হোটেলের স্পেশাল শাহী দম বিরিয়ানী নামের মোরগ পোলাও তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে- চিনি, গুড়া চাল, বয়লার মুরগি ও সরিষার তেল। এক প্লেট মোরগ পোলাওতে দেওয়া হচ্ছে- পোলাওসহ এক টুকরো মুরগীর মাংশ, হাফ ডিম, লেবু ও শশা। তারা নিজেরাই রান্না করে পরিবেশন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করায় এত কম টাকায় বিক্রির পরও তাদের লাভ হচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ টাকা।
টাঙ্গাইল পাসপোর্ট অফিসের গ্রাহক ও হোটেলটির ক্রেতা গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল গ্রামের সুমী জানান, সাধারণ মানুষের জন্য ৭১ টাকায় বিরিয়ানী তাদের কাছে অনেক কিছু। এই বিরিয়ানী যদি তারা হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খেতে যান তাহলে সর্বনিম্ন বিল হবে ১৮০-২০০০ টাকা। পরিবেশসহ খাবারের মানও ভালো। ৭১ টাকায় এক প্লেট পোলাও, এক টুকরো মুরগির মাংশ, ডিম, লেবু ও শশা পাওয়া যাচ্ছে। সরিষার তেল দিয়ে খাবার রান্না করায় স্বাস্থ্যসম্মত।
পাসপোর্ট অফিসে আসা ক্রেতা এম রতন মিয়া জানান, অনেকেই ভাবতে পারেন এই মোরগ পোলাও এর দাম কম তাই মান ভালো হবে না। তাদের বলছি-এমনটা নয়। খুবই মানসম্মত। রিকশা-ভ্যান চালকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে এই মোরগ পোলাওয়ের দাম।
লাযীয বিরিয়ানী হোটেলের মালিক রাজীব হোসেন জানান, মানুষকে কম দামে ভালো খাবার দেওয়ার জন্য তারা প্রাথমিকভাবে এটা শুরু করেছেন। শুরুর পর তারা ক্রেতাদের ভালো সাড়া পান। এরই মধ্যে ক্রেতারা এর মান ভালো বলে ভিড় করতে শুরু করেছেন।
তিনি আরও জানান, এই খাবার প্রতিদিন দুপুরে তারা নিজেরাও খেয়ে থাকেন। ৭১ টাকার ১ টাকা জমা রেখে সমাজের খেতে না পারা ব্যক্তিদের সহায়তা করা হচ্ছে এবং খাবার বাবদ তারা ৭০ টাকা নিচ্ছেন।
এসআইএইচ